বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

মাছের শুক্রাণু সংরক্ষণে বাকৃবির সফলতা

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

মাছের শুক্রাণু সংরক্ষণে বাকৃবির সফলতা

সেই ২০০২ সালে মাছের শুক্রাণু সংরক্ষণের জন্য গবেষণা শুরু করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকস বিভাগের একদল গবেষক। উদ্দেশ্য ছিল দীর্ঘমেয়াদে মাছের শুক্রাণু সংরক্ষণের মাধ্যমে মাছের প্রজাতির বিশুদ্ধতা রক্ষা করা। সেই সঙ্গে মাছের গুণগত মান ঠিক রেখে উৎপাদন বাড়ানো। অবশেষে দীর্ঘ ২৩ বছর পর দেশে প্রথমবারের মতো মাছের ক্ষেত্রে ক্রায়োপ্রিজার্ভড শুক্রাণু ব্যবহার করে বাণিজ্যিক হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর আগে গরুর জাত উন্নয়নে ও দেশি গরুর কৃত্রিম প্রজননে উন্নত জাতের গরুর ক্রায়োপ্রিজার্ভড শুক্রাণু দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবহার হয়ে এলেও মাছের ক্ষেত্রে এটিই প্রথম। গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার জানিয়েছেন, বিপন্নপ্রায় মাছের প্রজাতি রক্ষায় ক্রায়োপ্রিজার্ভেশন পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কারণ যুগের পর যুগ এ পদ্ধতির মাধ্যমে ভালো জাতের মাছের শুক্রাণু সংরক্ষণ করা এখন থেকে সম্ভব হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান এই গবেষক।

গবেষণাসূত্রে জানা যায়, ইউএসএইড-ফিড দ্য ফিউচার ইনোভেশন ল্যাব ফর ফিশের অর্থায়নে পরিচালিত ‘ক্রায়োজেনিকস্পার্ম ব্যাংকিং অব ইন্ডিয়ান মেজর কার্পস অ্যান্ড এক্সোটিক কার্পস ফর কমার্শিয়াল সিডপ্রোডাকশন অ্যান্ড ব্রুড ব্যাংকিং’ প্রকল্পের আওতায় বাকৃবির ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার এবং যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিইয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির এগ্রিকালচারাল সেন্টারের অ্যাকুয়াটিক জার্মপ্লাজম অ্যান্ড জেনেটিক রিসোর্স সেন্টারের অধ্যাপক ড. টেরেন্সটিয়র্সের নেতৃত্বে গবেষণায় এ সফলতা অর্জিত হয়। গবেষণা দলে আরও ছিলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মতিউর রহমান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মরিয়ম।

প্রকল্পের আওতায় প্রথমে হালদা ও পদ্মা নদী থেকে রুই, কাতলা, মৃগেল এবং চীন থেকে আমদানি করা সিলভার, বিগহেড ও গ্রাসকার্প মাছের বিশুদ্ধ জাত সংগ্রহ করা হয়। একই সময়ে দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে এ ছয় প্রজাতির মাছের শুক্রাণু ক্রায়োপ্রিজারভেশন করার কৌশল উদ্ভাবন করা হয়। এ ছয় প্রজাতির বিশুদ্ধ জাতের শুক্রাণু বিভিন্ন মেয়াদে ক্রায়োপ্রিজার্ভড করা হয়। পরে এ ক্রায়োপ্রিজার্ভড শুক্রাণু ব্যবহার করে ময়মনসিংহ, যশোর, ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলের সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারিতে মাছের কৃত্রিম প্রজনন করা হয় এবং সফলভাবে পোনা উৎপাদন করা হয়।

ড. মোহাম্মদ মতিউর রহমান জানান, ক্রায়োপ্রিজারভেশন হলো তরল নাইট্রোজেনের ভিতর মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দীর্ঘমেয়াদে শুক্রাণু সংরক্ষণের কৌশল। এ পদ্ধতিতে যতদিন খুশি ততদিন মাছের শুক্রাণু সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে ব্যবহার করা যায়। উন্নত অনেক দেশে এ প্রযুক্তি ব্যবহার হলেও দেশে বাণিজ্যিক হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদনে এটাই প্রথম সফল প্রয়োগ।

ড. মরিয়ম জানান, মাঠ পর্যায়ে গবেষণায় দেখা গেছে একই মা মাছের ডিম ব্যবহার করে ক্রায়োপ্রিজার্ভড শুক্রাণু দিয়ে উৎপাদিত পোনার বৃদ্ধির হার তুলনামূলক বেশি হয়। এর প্রধান কারণ হলো ক্রায়োপ্রিজারভেশন প্রক্রিয়ায় কৌলিতাত্ত্বিক গুণাবলিযুক্ত বিশুদ্ধ জাতের মাছের শুক্রাণু সংরক্ষণ করা হয়েছে। অন্যদিকে অন্তঃপ্রজনন, সংকরায়ন ইত্যাদি কারণে হ্যাচারির ব্রুড মাছের কৌলিতাত্ত্বিক গুণাগুণ অনেক ক্ষেত্রেই কম হচ্ছে, ফলে হ্যাচারির ব্রুড মাছ থেকে উৎপাদিত পোনার বৃদ্ধির হার কম হচ্ছে।

ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার সততা মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ও ফিশারির স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম জানান, এ পদ্ধতিতে ভালো জাতের মাছ উৎপাদনের শতভাগ নিশ্চয়তা রয়েছে। ইতোমধ্যে আমি সুফল ভোগ করছি। যত দ্রুত সম্ভব সারা দেশে এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়া গেলে মাছের বিশুদ্ধতা রক্ষা করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব কয়েক গুণ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর