শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

পথ দেখাচ্ছে ছাদকৃষি লার্নিং সেন্টার

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

পথ দেখাচ্ছে ছাদকৃষি লার্নিং সেন্টার

বগুড়ার নন্দীগ্রামে ‘ছাদকৃষি লার্নিং সেন্টার’ বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের পথ দেখাচ্ছে। ভাঙা বোতল, মাটির পাত্রসহ ফেলনা পাত্রে ছাদবাগান গড়ে তরুণদের আগ্রহী করে তুলতে হাতে কলমে শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। ফুল, ফল, ক্যাকটাস এমনকি ঔষধি গাছ থেকে শুরু করে সবজির বাগান গড়ে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা আদনান বাবু গড়ে তুলেছেন ছাদকৃষি লার্নিং সেন্টার। এ সেন্টার থেকে শত শত মানুষ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে ছাদবাগান গড়ে সফলতা পেয়েছেন। জানা যায়, নন্দীগ্রাম উপজেলাটি কৃষিতে সমৃদ্ধ এক জনপদ। প্রধান ফসল ধান হলেও পিছিয়ে নেই আলু, সরিষা, মরিচসহ অন্যান্য সবজি ও ফল উৎপাদনে। বোরো, আউশ ও আমন ধান উৎপাদনে জেলায় শীর্ষে রয়েছে এ জনপদ। উচ্চমূল্যের ফসল স্ট্রবেরি, ড্রাগন, সৌদি খেজুর, ক্যাপসিকাম, মিশ্র ফলবাগান, বারোমাসি তরমুজের আবাদ নন্দীগ্রামের কৃষিকে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আদনান বাবুর ছাদকৃষি লার্নিং সেন্টারে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫ শতাধিক শ্রেণি-পেশার মানুষ ছাদকৃষি লার্নিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ছাদে বাগান গড়ে সফলতা পেয়েছেন। এটি গড়ে তোলা হয় ২০২১ সালের অক্টোবরে। যে-কেউ খুব সহজেই বিভিন্ন উপকরণ সম্পর্কে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান লাভ করতে পারবেন। এ ছাড়া পরিত্যক্ত বোতলে পিঁয়াজ চাষ, খালি বস্তা ব্যবহার করে খুব সহজেই আদা, হলুদ চাষের অভিনব প্রযুক্তিগুলোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। ছাদে রয়েছে সবজি কর্নার, ফুলের কর্নার এবং ফলের কর্নার। সবজি কর্নারে লাগিয়েছেন করলা, চিচিঙ্গা, টম্যাটো, বেগুন, মরিচ, লাউ, ঢ্যাঁড়শ, পেঁপে, শসাসহ প্রায় ২০ রকম সবজি। এ সবজিগুলোর মাচা তৈরি করা হয়েছে একটু ভিন্নভাবে। ফুলের কর্নারে শোভা ছড়াচ্ছে পয়েনসেটিয়া, অ্যাজিলিয়া, সিজিয়াম, বেলি, সাদা নয়নতারা, গোলাপি নয়নতারা, কমলা রঙ্গন, লাল রঙ্গন, লাল জবা, সাদা জবা, কমলা জবা, স্থলপদ্ম, বাগানবিলাস, পাতাবাহার, ক্যাকটাস, পর্তুলিকাসহ শোভাবর্ধনকারী হরেকরকম গাছ। ফলের কর্নারে রয়েছে বারোমাসি আম, অগ্নিশ্বর কলা, থাই পেয়ারা, দেশি মাল্টা, আমড়া, কামরাঙা, লেবু, কদবেল, জাম্বুরা, সুইট লেমন, শরিফাসহ নানা প্রজাতির ফলগাছ। বিদেশি ফলগাছের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। রয়েছে ড্রাগন, কমলা, চায়নিজ কমলা, ভেরি গেটেড মাল্টা ইত্যাদি। ছাদকৃষির পাশাপাশি মাঠকৃষিরও নানা প্রযুক্তি এখানে রয়েছে। পোকা দমন, হলুদ আঠালো ফাঁদের ব্যবহার করে সহজেই উড়ন্ত পোকা দমন ব্যবস্থারও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

নন্দীগ্রামে ইতোমধ্যে সরিষাবাদের রইচ উদ্দিন, বুড়ইল দক্ষিণপাড়ার সেলিম রেজা, বড় চাঙ্গুইরের পলককুমার সাহার বাড়ির ছাদসহ ৩০টি বাড়ির ছাদে এ সেন্টারের আদলে ছাদকৃষির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন ছাদকৃষি করে সফলতা পেয়েছেন। ছাদকৃষি লার্নিং সেন্টার গড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে আদনান বাবু বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তি যেন নিজ পরিবারের সবজি ও অন্যান্য ফল, ফুল ছাদ থেকেই পেয়ে থাকে। এতে অর্থ বাঁচবে, জোগান বাড়বে।

বড় চাঙ্গুইরের পলককুমার সাহা জানান, প্রথমে ছাদকৃষি লার্নিং সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন জাতের ফুল ও ফলের চারা সংগ্রহ করে বাগান গড়েছেন। তিনি তাঁর ছাদে লাউ, বিভিন্ন প্রকার শাক, ঢ্যাঁড়শ, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করেছেন। সবজির বাগান থেকে যে ফলন পান তা দিয়ে পরিবারের চলে যায়। সবজিগুলো তাজা ও দূষণমুক্ত। যেটি পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য ভালো রাখছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর