শিরোনাম
রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

অভিভাবকহীন সিলেট নগরীতে বাড়ছে দুর্ভোগ

ফুটপাত ও রাস্তা দখল হওয়ায় বেড়েছে যানজট, নেই জনদুর্ভোগ নিরসনের উদ্যোগ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

মেয়র দুজন। একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত, অন্যজন নবনির্বাচিত। দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মেয়াদ আছে আরও প্রায় সাড়ে তিন মাস। আর নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দায়িত্ব নেবেন ৭ নভেম্বর। সিলেট সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র থাকলেও নগর বেহাল। অনেকটা অভিভাবকহীনভাবে চলছে সিলেট নগরী। উন্নয়ন তদারকি ও নাগরিক দুর্ভোগ নিরসনের চেয়ে দলীয় রাজনীতি নিয়েই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। ফলে নগরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বিশৃঙ্খল অবস্থা। এতে বেড়েই চলছে জনদুর্ভোগ। সিলেট নগরীর যানজট নিরসনে আরিফুল হক চৌধুরীর নেওয়া বেশ কিছু উদ্যোগ নগরবাসীর কাছে প্রশংসিত হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ব্যস্ততম সড়কগুলো প্রশস্তকরণের পাশাপাশি ডিভাইডার ও প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ, হকার নিয়ন্ত্রণ এবং বারুতখানা-জল্লারপাড় ও কোর্ট পয়েন্ট-চৌহাট্টা সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ। এ ছাড়া নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনি কাউন্সিলর ও নগর ভবনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কয়েকটি টিমও গঠন করেন। কিন্তু মেয়র আরিফের নেওয়া এ উদ্যোগগুলো এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। নজরদারি কমে যাওয়ায় নগরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে হযবরল অবস্থা। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন লন্ডনে যান আরিফুল হক চৌধুরী। সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকও করেন। নির্বাচন নিয়ে আরিফের সিদ্ধান্ত জানতে নগরবাসী অপেক্ষায় ছিলেন। গত ১৬ এপ্রিল তিনি দেশে ফেরেন। সিদ্ধান্ত জানাতে সময় নেন আরও এক মাস। সর্বশেষ সমাবেশ করে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন। লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর থেকে নগরীর উন্নয়ন কর্মকান্ড তদারকি ও জনদুর্ভোগ সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে তৎপরতা কমিয়ে দেন আরিফ। নগর ভবনের চেয়ে দলীয় রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দিতে থাকেন তিনি। ফলে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে সিলেট। এই সুযোগে সিলেট নগরীর ব্যস্ততম সবকটি সড়কের পাশের ফুটপাত ফের হকারদের দখলে চলে যায়। বিকাল হলে নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম বন্দরবাজার-চৌহাট্টা সড়কটিও হকারদের দখলে চলে যেতে থাকে। হকাররা ফুটপাতের পাশাপাশি সড়কের অর্ধেকের বেশি দখল করে তাদের জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখেন। একই অবস্থা আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট, রিকাবিবাজার, শিবগঞ্জসহ ব্যস্ততম সব সড়কে। এ ছাড়া আগে যেসব সড়ক দিয়ে রিকশা চলাচল বন্ধ ছিল, সেগুলোও উন্মুক্ত হয়ে যায়। আগে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার, জল্লারপাড়, বারুতখানা, তাঁতীপাড়া ও চৌহাট্টায় সিটি করপোরেশনের কর্মীরা রিকশা আটকানোর কাজ করতেন। কিন্তু আরিফুল হক চৌধুরী ১৬ এপ্রিল লন্ডন থেকে ফেরার পর থেকে ওইসব স্থান থেকে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ফলে এসব রাস্তা দিয়ে অবাধে রিকশা চলাচল শুরু হয়। রাস্তা ও ফুটপাতে হকার এবং রিকশার দৌরাত্ম্যে নগরজুড়ে প্রতিদিন দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

ঈদের আগে নগরবাসী দুই দফা ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হলেও দেখা মেলেনি মেয়র আরিফের। তিনি ওই সময় ঢাকায় দলীয় কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আগে নগর ভবনের ব্যস্ততা ও উন্নয়ন কাজ তদারকির অজুহাত দেখিয়ে দলীয় রাজনীতি থেকে সরে থাকার চেষ্টা করতেন আরিফ। আর নির্বাচনের পর থেকে তিনি চলছেন উল্টো। বেশির ভাগ সময়ই তিনি রাজনীতি নিয়ে ঢাকা ও সিলেটে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলে নগর ভবনেও যাচ্ছেন না নিয়মিত। সিলেট নগরীর বিশৃঙ্খল অবস্থা প্রসঙ্গে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দলীয় সভা নিয়ে তিনি ঢাকায় ব্যস্ত আছেন। তবে জনদুর্ভোগ নিয়ে অমনযোগিতার কথা অস্বীকার করেন তিনি। এদিকে আগামী ৭ নভেম্বর দায়িত্ব নেবেন নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ৩ জুলাই শপথ নিলেও বর্তমান পরিষদের মেয়াদ থাকায় তিনি দায়িত্ব নিতে পারছেন না। দায়িত্ব নেওয়ার পরই একটি সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত নগরীর গড়তে পরিকল্পনা তৈরির কথা জানিয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

 

 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর