রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

জীবন ও জরিমানা দুটিই গুনতে হচ্ছে চট্টগ্রামবাসীকে

গান বাজিয়ে, মাইকিং, লিফলেট বিলি ও ড্রোন উড়িয়ে দায়মুক্তির কৌশল চসিকের

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

বন্দর নগর চট্টগ্রামে চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন পাঁচজন। প্রতিদিন নতুন করে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। অন্যদিকে বাসার ছাদে বা আঙিনায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মশার লার্ভা থাকলেই জরিমানা গুনতে হচ্ছে ভবন মালিককে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় কোনো সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে না পারলেও জীবন আর জরিমানা দুটি নগরবাসীর ওপর চাপিয়ে দিয়ে দায় সারছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এমনকি ব্যর্থতা ঢাকতে লোকদেখানো ক্রাশ প্রোগ্রাম, ড্রোন উড়িয়ে ছাদে মশা খোঁজার নামে দায় চাপানোর কৌশল আর মশা নিয়ে গান তৈরি ও শোনাতেই ব্যস্ত সংস্থাটি। নগর পরিকল্পনাবিদ সুভাষ বড়ুয়া বলেন, সিটি করপোরেশনের কাজ হচ্ছে সারা বছর শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা। মশক নিধনে ওষুধ ছিটানো ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু সারা বছর খবর থাকে না, মানুষের জীবন যাওয়ার পর তারা কাজগুলো করে। এখন তো জরিমানা করে ডেঙ্গুর প্রকোপ বন্ধ করা যাবে না। এখন যখন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তখন তারা গান রচনা করছে, ড্রোন ওড়াচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে। এসব কিছু করা হচ্ছে মূলত নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করে জনগণের ঘাড়ে দায় চাপানোর জন্য। মূলত সঠিক পরিকল্পনা ও  জবাবদিহিতা না থাকার কারণে যে যার মতো কাজ করছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা পাঁচটি স্পটে গান চালিয়ে প্রচার অভিযান চালাচ্ছি। পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্টের নেতৃত্বে ১০টি স্পটে প্রতিদিন ডেঙ্গু সচেতনতায় প্রচার ও লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। মশা নিধনে বাজেটে ৫ কোটি টাকা খরচ ধরা হলেও, এর চেয়ে বেশি খরচ করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা। জানা গেছে, নগরীর বাসাবাড়ি ও অফিস-আদালতের ছাদবাগান এবং অন্যান্য উৎসে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা খুঁজতে ড্রোন ব্যবহার করছে চসিক। ড্রোনটির জন্য চসিককে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ড্রোন পরিচালনার জন্য এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে চসিক। পাশাপাশি ৪৩ হাজার টাকা খরচ করে রেকর্ডিং করা হয়েছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সচেতনতামূলক গান।তবে চসিকের এসব কর্মকান্ড কতটুকু ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে পারবে ও জনসচেতনতায় কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

চসিক সূত্র জানায়, গত ৫ জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত নগরীর নির্মাণাধীন বাড়ির নিচতলা ও ছাদ, ছাদবাগান কিংবা কোনো বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের পরিত্যক্ত স্থানে পানি জমে থাকায় চারটি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৯ জনকে প্রায় ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এদিকে চসিকের পরিচ্ছন্নতা স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান কাউন্সিলর মোবারক আলীর নিজ ওয়ার্ডের বিরিহাট, মুরাদপুর ও হামজারবাগ এলাকায় অপরিচ্ছন্নতা ও মাত্রাতিরিক্ত মশার উৎপাতের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। অভিযোগ রয়েছে, নিয়মিত মশার ওষুধ না ছিটানোর কারণে মশার উৎপাত ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশা নিধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বরাদ্দ রেখেছে ৫ কোটি টাকা, যা বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের পাঁচ গুণ। গেলবার মশা নিধনে ১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে চসিক। এর মধ্যে শুধু মশার ওষুধ কেনায় ব্যয় দেখানো হয়েছে ৮০ লাখ টাকা।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর