সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

তিস্তাপাড়ে আলোর হাতছানি

৩০ জুলাই রংপুর যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, ঘোষণা আসতে পারে মহাপরিকল্পনার

নজরুল মৃধা, রংপুর

প্রতিবছরই বন্যা ও খরায় তিস্তাপাড়ের মানুষের দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। তিস্তা নদীর দুই পাড়ের লাখ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে পারে একমাত্র মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তিস্তাপাড়ের মানুষের পানির জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। সেই সঙ্গে পাল্টে যাবে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা। ৩০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরে আসছেন। তিস্তাপাড়ের মানুষ এবং তিস্তা নিয়ে যারা আন্দোলন করে আসছেন তাদের আশা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের জনসভায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেবেন। তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানি ও সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেন, ১৩ জুলাই ঢাকায় সাবেক সচিব কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে তারা দেখা করেছিলেন ছয় সদস্যের একটি দল নিয়ে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখ লাঘবে যত দ্রুত সম্ভব তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কাজের উদ্বোধন করা হবে। পুরো প্রকল্পটি তিনটি ইউনিটে ভাগ করে প্রথম ইউনিটের কাজ এ বছরই শুরু হবে।  মোট সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার কাজে প্রথম ইউনিটে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার কথায় তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতারাসহ তিস্তাপাড়ের মানুষ আশা করছেন, প্রধানমন্ত্রী ৩০ জুলাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেবেন। আর এ জন্য তিস্তপাড়ের বাসিন্দারা  অধীর অপেক্ষায় বসে আছেন। জানা গেছে, পরিকল্পনায় রয়েছে ডালিয়া পয়েন্ট থেকে ব্রহ্মপুত্রের সংযোগস্থল পর্যন্ত নদী খনন। নদীর দুই তীর রক্ষা বাঁধ করা হবে। ড্রেজিং করে যে মাটি উত্তোলন হবে সেই মাটি নদীর দুই পাশে ভরাট করে ইপিজেড, সোলার পাওয়ার প্লান্টসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে। এতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করার কথা রয়েছে চীনের।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত বছর চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং তিস্তার ডালিয়া পয়েন্ট ও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শেখ হাসিনা সেতুর ওপর তিস্তা নদী পরিদর্শন করেছেন। তবে স্থানীয়দের দাবি, কারও কাছে হাত পেতে নয়, পদ্মা সেতুর মতো তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে। জানা গেছে, শুকনো মৌসুমে তিস্তার চারদিকে দেখা যায় ধু-ধু বালুচর। পানির অভাবে তিস্তা নদীর আশপাশের এলাকায় পানি অনেক নিচে নেমে যায়। ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে তিস্তা প্রকল্পে প্রতিবছরই পানির ঘাটতি দেখা দেয়। আবার বর্ষাকালে প্রবল পানির তোড়ে ব্যারাজ ও আশপাশের অঞ্চল ঝুঁকির মুখে পড়ে।

তখন ডালিয়া ব্যারাজের ৪৪টি গেট রাতদিন খুলে রেখেও পানি সরানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে শুকনো ও বর্ষা দুই মৌসুমে তিস্তা অববাহিকার মানুষের সময় কাটে দীর্ঘশ্বাসে। শুকনো মৌসুমে ভারতে পানির ওপর নির্ভরতা থাকায় তিস্তা অববাহিকার পাঁচ জেলা নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় পানির জন্য হাহাকার দেখা দেয়। তিস্তা নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে শুকনো মৌসুমে ভারতে কাছে পানির জন্য হাত পাততে হবে না।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর