রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

মাসব্যাপী ১ লাখ গণস্বাক্ষর আদায়ের কর্মসূচি ১১ আগস্ট বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা

ভোলার গ্যাস দক্ষিণাঞ্চলে সরবরাহ আন্দোলনে ভিন্নমাত্রা

রাহাত খান, বরিশাল

ভোলার গ্যাস দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প ও আবাসিকে সরবরাহে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের দাবিতে বড় ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন। বরিশাল ও ভোলায় শুরু হওয়া এই আন্দোলন বিভাগের অপর চার জেলায় ছড়িয়ে দিতে কর্মসূচি নিয়েছে তারা। ‘ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলে নাগরিক আন্দোলন’ নামে একটি মোর্চার ব্যানারে এই আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে মাসব্যাপী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ এবং বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার আয়োজন করেছে তারা। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এক জনসমাবেশে লাহারহাট-ভেদুরিয়া (বরিশাল-ভোলা) পয়েন্টে সেতু নির্মাণের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস বরিশালের শিল্প ও আবাসিকে সরবরাহ এবং ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ফোর লেন ও রেললাইন নির্মাণের ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পর সরকার নিয়োজিত একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা রেললাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। ফোর লেন নির্মাণে প্রথম পর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিনিয়োগকারী সংস্থা পেলে ফোর লেন ও রেললাইন নির্মাণ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বরিশাল-ভোলা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই ফাইলে আবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পাঁচ বছর পরও লাহারহাট-ভেদুরিয়া পয়েন্টে সেতু নির্মাণ এবং ওই সেতু হয়ে পাইপলাইনে ভোলার গ্যাস দক্ষিণাঞ্চলে সরবরাহের সম্ভাবনা আপাতত ক্ষীণ।

এ অবস্থায় সরকারের জ্বালানি বিভাগ গত ১০ মে ভোলার গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তর করে গাজীপুর ও ময়মনসিংহের ভালুকার শিল্পাঞ্চলে সরবরাহের পরিপত্র জারি করে। ২১ মে সরকার ইন্ট্রাকো নামে একটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদে চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী সরকারের কাছ থেকে ভোলার গ্যাস কিনে তা সিএনজিতে রূপান্তর করে সরবরাহ করবে তারা। প্রথম পর্যায়ে দৈনিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট এবং পরে ২০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করা হবে। ভালুকা ও গাজীপুরে জ্বালানি সংকটে থাকা কারখানাগুলো এই গ্যাস সরবরাহে অগ্রাধিকার পাবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বরখেলাপ করে ভোলার গ্যাস বরিশালের বাইরে সরবরাহের বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো। সরকারের ওই চুক্তি বাতিল করে ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভোলার গ্যাস সিলিন্ডারজাত (সিএনজি) করে দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প ও আবাসিক পর্যায়ে সরবরাহের দাবিতে জনমত গঠনে গত ১১ জুলাই বরিশালে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন সভায় একাত্মতা প্রকাশ করে। সভায় ‘ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলে নাগরিক আন্দোলন’ নামে একটি কমিটি গঠিত হয়। যার আহ্বায়ক অধ্যাপক শাহ আজিজুর রহমান খোকন এবং সদস্য সচিব বাসদ নেত্রী ড. মনীষা চক্রবর্তী। রাজনৈতিক-সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের কমিটিতে যুক্ত করা হয়।

কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল বলেন, ভোলার গ্যাসের অগ্রাধিকার বরিশালের মানুষের। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বরখেলাপ করে বরিশালের মানুষকে বঞ্চিত করে সরকার অন্য জেলায় এই গ্যাস সরবরাহের চুক্তি করেছে। সর্বসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে এই চুক্তি বাতিল করে বরিশালে গ্যাস সরবরাহের দাবি আদায় করবেন তারা।

কমিটির আরেক সদস্য জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান সেলিম বলেন, আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে আজ রবিবার মাসব্যাপী সাক্ষরতা অভিযান শুরু হবে। শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আপামর ১ লাখ মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হবে। আগামী ১১ আগস্ট বিভাগের অন্য জেলার প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলসহ অন্যদের সঙ্গে বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর