সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

খুলনায় চিকিৎসাসেবার যত চ্যালেঞ্জ

জনবল, শয্যা, চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কমিশন বাণিজ্য

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনায় চিকিৎসাসেবার যত চ্যালেঞ্জ

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায়  সময়ই ধারণক্ষমতার তিন গুণেরও বেশি      রোগী ভর্তি থাকে। শয্যা না পেয়ে রোগীর ঠাঁই   হয় হাসপাতালের মেঝে বা বারান্দায়। ৫০০ শয্যার হাসপাতালে বরাদ্দকৃত ওষুধ খাদ্য (পথ্য) ভাগ করে দেওয়া হয় ভর্তিকৃত ১৬ শ থেকে     ১৭ শ রোগীকে। 

হাসপাতালে চিকিৎসকের ২৮৮টি পদের মধ্যে ৯২টি পদ শূন্য। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল কাঠামো এখনো আগের ২৫০ শয্যা অনুপাতে রয়েছে। সেখানে ২২৬টি পদের মধ্যে ১৪৪টি শূন্য।

একইভাবে শয্যা সংকটে আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে রোগী ভর্তির জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় দিনের পর দিন। এ ছাড়া অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন নষ্ট হয়ে রয়েছে। অবকাঠামো সংকটে বছরের পর বছর বাক্সবন্দি রয়েছে দামি চিকিৎসা সরঞ্জাম। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ।

নাগরিক নেতা, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফুজ্জামান জানান, খুলনা এখন বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নগরীতে পরিণত হয়েছে। অলিগলিতে কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই গড়ে উঠছে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। প্রতিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কমিশনের টাকা গুনতে হয় রোগী ও তাদের স্বজনদের। মানহীন চিকিৎসায় ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়।

জানা যায়, খুলনায় স্বাস্থ্য খাতে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সরকারি ওষুধ চুরি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে জমজমাট কমিশন-বাণিজ্যে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ছয় বছর ধরে এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বরাদ্দ না থাকায় মেরামতের অভাবে ডেন্টাল চেয়ারসহ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন মেরামতের জন্য কয়েকদফা চিঠি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু  কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ফলে স্থানীয়রা বেশি টাকা দিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বাধ্য হয়।

এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্সার ইউনিটের সামনে বাক্সবন্দি পড়ে আছে  ১০ কোটি টাকা মূল্যের লিনিয়ার  অ্যাকসিলারেটর মেশিন। অবকাঠামো না থাকায় মেশিনটি স্থাপন করা যায়নি। এখানে হার্টের চিকিৎসায় ইকো মেশিন নষ্ট হয়ে আছে। নষ্ট হয়ে গেছে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স। হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান জানান, হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়ে তিন গুণের বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জনবল সংকটের কারণে এত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর