মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভয়ংকর সাইবার প্রতারক

প্রতারণার শিকার হচ্ছেন নারী পুরুষ উভয়ই, খোয়া যাচ্ছে টাকা-পয়সা মান-সম্মান

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ভয়ংকর সাইবার প্রতারক

চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন (ছদ্মনাম)। মাসদুয়েক আগে একটি অপরিচিত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে ভিডিও কল এলে সেটি রিসিভ করেন। অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কয়েকদিন পর ওই নম্বর থেকে একটি এডিট করা ভিডিও কলের স্কিনশর্ট পাঠায় প্রতারক চক্র। তাদের চাহিদামতো টাকা না দিলে এডিট স্কিনশর্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেররিজম বিভাগে অভিযোগ করলে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এভাবে তথ্যপ্রযুক্তির প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে অপরাধে নেমেছে সাইবার অপরাধীরা। কোনো কোনো চক্র এডিট করা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে প্রতারণা করছেন। আবার কোনো চক্র ই-কমার্স, ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণা করে বিস্তৃত করছে সাইবার অপরাধ জগৎ।

প্রযুক্তিবিদ ড. ফয়সাল কামাল চৌধুরীর মতে- বেশির ভাগ ভুক্তভোগী নিজের অজ্ঞতার কারণেই প্রতারিত হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা হয় কারণে-অকারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী স্পর্শকাতর তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন। পরে দেখা যায় সেই তথ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে প্রয়োজন ব্যবহারকারীদের সচেতনতা এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সক্ষমতা বাড়ানোর। 

সিএমপির কাউন্টার টেররিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির প্ল্যাটফরমকে ব্যবহার করে অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। একসময় সাইবার ক্রাইমের ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই ছিলেন নারী। এখন ভুক্তভোগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যকই হচ্ছেন পুরুষ।’

তিনি বলেন, ‘সচেতনতার অভাবেই বেশির ভাগ ভুক্তভোগী সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করার সময় সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে অপরিচিত কোনো আইডি কিংবা নম্বর থেকে আসা লিংক সচেতনভাবে এড়িয়ে যেতে হবে।’

জানা যায়, তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিকায়নের ছোঁয়া লেগেছে অপরাধ জগতেও। অপরাধী চক্রগুলো অনলাইন প্ল্যাটফরমে পেতেছে একের পর এক অপরাধের ফাঁদ। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে অত্যাধুনিক অস্ত্র হিসেবে। রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা, গুজব ছড়ানো, হ্যাকিং, অনলাইন ব্যবসার নামে প্রতারণা, প্রযুক্তি ব্যবহার করে জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি, এনআইডি জালিয়াতি, পর্নোগ্রাফিসহ নানা অপরাধী চষে বেড়াচ্ছে সাইবার দুনিয়া। এগুলোর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ক্রেডিট কার্ড প্রতারণা, ই-কমার্স, এফ-কমার্স, অনলাইন জুয়া, ইমু হ্যাকিং, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা, এটিএম কার্ড জালিয়াতি ও অপরিচিত নম্বর থেকে আসা ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রতারণা। এছাড়া লোভনীয় অফারের লিংক পাঠিয়ে ক্লিক করতে বলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেওয়া এবং ম্যালওয়ারের মাধ্যমে সাইবার অপরাধের অভিযোগও আসছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে। চট্টগ্রাম জেলা ও নগরীর বিভিন্ন থানায় প্রতি মাসে সাইবার অপরাধের দুই শতাধিক অভিযোগ জমা হচ্ছে।

অভিযোগকারীদের ৫৫ শতাংশ থাকেন নারী এবং ৪৫ শতাংশ পুরুষ। যাদের বেশির ভাগরই বয়স ২৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ২০২১ সালে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে ৭০০টি মামলার বিচার কাজ শুরু হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে বেশির ভাগই হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিকৃত ছবি ও তথ্য প্রকাশ, ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মানহানিকর তথ্য প্রকাশের অভিযোগে।

সম্প্রতি অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন চট্টগ্রামের চিকিৎসক আফরোজা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়ান সাইকেল বাজার’ নামে একটি অনলাইন শপ থেকে ৩ হাজার ১৫০ টাকা দিয়ে সাইকেল কিনি। তাদের চাহিদামতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকাও পরিশোধ করি। কিন্তু প্রতারক চক্র সাইকেল সরবরাহ করেনি। উল্টো তাদের নম্বরে আমাকে ব্লক করে দিয়েছে। এ চক্রের হাতে যাতে আর কেউ প্রতারিত না হন এ জন্য আইনগত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর