বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাঁধ চায় তিস্তাপাড়ের মানুষ

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

শেখের বেটি হাসিনা আইজ অংপুরে আসবে। তার কাছোত হামার দাবি তিস্তা নদীর বান্দোন (বাঁধ) চাই। এই বান্দোন হইলে জমি ফিরি পামো। ঘরবাড়ি কইরা থাকমু। আংগোর (আমাদের) খুব উপকার হইবো। আগের মতো সুখোত থাকমো; এভাবেই বলছিলেন তিস্তা পাড়ের জোহরা (৪৫) ও হাজেরা বেওয়া (৫২)। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার নিজ গড্ডিমারী গ্রামের অসহায় হাজেরা বেওয়া। স্বামী সোলেমান গণি ১০ বছর আগে মারা যান। সেই থেকে হাজেরা বেওয়া ছেলেকে নিয়ে তিস্তার গাইড বাঁধে আশ্রয় নিয়ে আছেন। এক সময় সব ছিল তাদের। তিস্তায় ছয়বার ঘরবাড়ি ভেঙে নিঃস্ব হয় পরিবারটি। একই এলাকার জোহরা বেগম। স্বামী সাঈদ আলী। তিস্তায় পাঁচবার ভেঙে বসতভিটা জায়গা-জমি হারিয়ে আজ দিনমজুর। তাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরে আসলে যেন তিস্তা নদী খনন ও দুই পাড়ে বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। এতে বসতভিটা, জায়গা-জমি রক্ষা হবে এমনই প্রত্যাশা তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষের। প্রধানমন্ত্রীর আসার খবরে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন এসব মানুষ। সরেজমিন দেখা যায়, তিস্তা নদীর দুই পাড় অরক্ষিত। সারা জীবনের শ্রম আর ঘামে বানানো পাকা ঘরবাড়ি নিমিষেই নদীতে বিলীন হয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের চর সিন্দুর্না ২ নম্বর ওয়ার্ডের জাহিদের পরিবার। তারা অন্যের জমিতে ঘর বানিয়ে আশ্রয় নিয়ে আছেন। জাহিদের পরিবারের মতো অসংখ্য পরিবারের ঠিকানা এখন গাইড বাঁধ। জাহিদ জানান, বাবা সামান্য একজন কৃষক। অনেক কষ্টে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে অনার্স, মাস্টার্স পাস করেও চাকরি জোটেনি। গত বছর জমি-বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে যায়। এক আত্মীয়ের কাছ থেকে এক টুকরো জমি নিয়ে বাড়ি করে বাবা-মাসহ কোনো মতে আছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রাণের দাবি, নদীর দুই তীরে বাঁধ নির্মাণ। তিস্তায় বাঁধ হলে ৩০ বছরে হারিয়ে যাওয়া জায়গা-জমি ফিরে পাব। জানা গেছে, তিস্তায় পানি সংকটে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে কৃষি জমিতে সেচ নিয়ে বিপাকে পড়েন উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার কৃষক।

অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় তিস্তা ব্যারাজের গেট খুলে দেওয়ায় পানিতে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। এসব কারণে তিস্তা নদী এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের। হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, প্রতিবছর ভাঙনে সংকুচিত হচ্ছে ইউনিয়নটি। ২০ বছরে প্রায় ২ হাজার পরিবার বসতভিটা হারা হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।

তিস্তা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নদীতীরের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। শিল্প কলকারখানা, নদীবন্দর গড়ে উঠবে। তিস্তা পাড়ের ২ কোটি মানুষ এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর