বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

বরিশালে দুর্ঘটনার যত কারণ

শ্রমিকদের কাছে জিম্মি বাস মালিকরা, পুলিশও নিরুপায়

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালে দুর্ঘটনার যত কারণ

ঝালকাঠিতে ২২ জুলাই বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১৭ জন নিহত হন। ওই বাস দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভান্ডারিয়া থেকে ঝালকাঠিগামী ৫২ সিটের বাসটিতে দাঁড়ানো অনেক যাত্রী ছিলেন। ছাদেও যাত্রী ছিলেন। বাসটি চলছিল বেপরোয়া গতিতে। চালক পথিমধ্যে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। সেই সঙ্গে ঘাড় ফিরিয়ে পাশের যাত্রীদের সঙ্গেও কথা বলছিলেন। ওই বাসের যাত্রী, প্রত্যক্ষদর্শী এবং বিপরীতমুখী এক মোটরসাইকেল চালকের বর্ণনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ঝালকাঠির সহকারী পরিচালক (এডি) মো. মাহবুবুর রহমান জানান, ওই বাসে আসন ফাঁকা না থাকার পরও ছত্রকান্দা থেকে বেশকিছু যাত্রী তোলা হয়। এর মধ্যে নারীরা সিট না পেয়ে সুপারভাইজারের সঙ্গে বাদানুবাদে লিপ্ত হন। চালক ঘাড় ফিরিয়ে সেদিকে মনোযোগ দেন। ততক্ষণে বাসটির স্টিয়ারিং বাঁ দিকে ঘুরে যায়। যা তিনি বুঝতে পারেননি। এ কারণে বাসটি মহাসড়কের ৩ ফুট লাগোয়া একটি পুকুরে পড়ে যায়। কোনো যানকে সাইড কিংবা ওভারটেক করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে তারা প্রমাণ পেয়েছেন। ২২ জুলাই ১৭ জন নিহতের রেশ না কাটতেই ২৫ জুলাই বরিশালের গৌরনদীতে দুটি বাসের সংঘর্ষে ২৫ জন এবং ২৬ জুলাই মাহিলাড়ায় বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন। ওই দুটি দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণেও দেখা যায়, যানবহনগুলো বেপরোয়া গতিতে চলছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালকের অবহেলা-অসাবধানতা, অতিরিক্ত যাত্রীবহন, বেপরোয়া গতি, সড়ক-মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যান চলাচল ও সার্ভিস লেন না থাকা, সড়কের পাশে বাজার, বিপজ্জনক বাঁক ও মোড় এবং রোডসাইন না থাকায় মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। তাঁরা বলছেন, দুর্ঘটনা রোধে মালিক-শ্রমিকসহ সড়ক বিভাগ, বিআরটিএ ও পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। সেই সঙ্গে সড়ক-মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যান নিয়ন্ত্রণ, সার্ভিস লেন নির্মাণ, সড়কের পাশে বাজার উচ্ছেদ, বিপজ্জনক বাঁক ও মোড় সম্প্রসারণ এবং রোডসাইন স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। চালকের অবহেলায় সড়কে মৃত্যুর বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন মালিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, বাসমালিকরা শ্রমিকদের কাছে জিম্মি। শ্রমিকরা গাড়ি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে অভ্যস্ত বা পারদর্শী নন। মালিকরা এর প্রতিবাদ করলে রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবে না। বিআরটিএ এবং ট্রাফিক বিভাগ হস্তক্ষেপ না করলে জানমালের ক্ষতি আরও বাড়বে, আশঙ্কা তাদের।পরিবহন শ্রমিক নেতা, বরিশাল-পটুয়াখালী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ও বরিশাল মহানগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ বলেন, যাত্রীদের জানমাল রক্ষায় শ্রমিকদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল আমিন হোসেন বলেন, সড়ক-মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, নসিমন, ভটভটি বন্ধ না হলে দুর্ঘটনা রোধ হবে না।

ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, সওজের রোড সেফটি বিভাগের গবেষণায় দুর্ঘটনার নানা কারণ উঠে এসেছে। পথচারী পারাপারে অসাবধানতায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এ ক্ষেত্রে সড়ক বিভাগের দায়িত্ব হলো রোড সাইন-সিগন্যাল স্থাপন করা। মহাসড়কে আলাদা সার্ভিস লেন করা।

সড়কে অতিরিক্ত যাত্রীবহন ও বেপরোয়া গতিতে যান চালানোর বিষয়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাইনুল হক বলেন, পুলিশ তাদের ধরে। মামলা দেয়। বাস্তবতা হলো, তার পরও চলে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর