শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুই মাথার পরোয়া করি না পন্থা, উদ্বিগ্ন নেতা-কর্মীরা

রাজশাহী : আওয়ামী লীগের হালচাল

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ ও নগর আওয়ামী লীগের ‘দুই মাথা’ মানে সভাপতি দুজনই ভারপ্রাপ্ত। তারা সংগঠন চালাচ্ছেন নিজস্ব পন্থায়। পন্থা হলো- ‘পরোয়া করি না কিছুই’। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা পন্থাটির বিরোধী। তাই তারা সংগঠনের ভবিষ্যৎ ভেবে উদ্বিগ্ন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন সাবেক এমপি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। অসুস্থতায় তিনি মারা গেলে সহ-সভাপতি অনীল সরকারকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি হন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। জাতীয় সম্মেলনে তাকে প্রেসিডিয়ামে নেওয়া হয়। ফলে নগর সভাপতির পদটি শূন্য হয়। ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় মোহাম্মদ আলী কামালকে। রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরেই চলছে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়ে। প্রথম দিকে সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সমন্বয় করে নানা কর্মসূচি পালন করলেও ছয় মাসের বেশি সময় ধরে দুই সভাপতিই রীতি ভঙ্গ করে নানা সভা আহ্বান করছেন দুই কমিটির সাধারণ সম্পাদককে ছাড়াই। নানা কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এমনকি দলীয় নানা কর্মসূচি পালনের সভা আহ্বান করার দায়িত্ব সাধারণ সম্পাদকের হলেও ভারপ্রাপ্ত সভাপতিরা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে দিয়ে সভা আহ্বান করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের বিরোধ মূলত দলীয় কার্যালয় নিয়ে। জেলা কমিটির নেতারা অলোকার মোড়ে একটি চেম্বারে বসেন। সিটি হাট এলাকায় চলছে এমপি এনামুলের দেওয়া স্থায়ী কার্যালয়ের নির্মাণকাজ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার অভিযোগ, এমপি এনামুল আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের জন্য জমি দিয়েছেন, বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগকে জানাননি। ফলে তারা ওই কার্যালয়ে যান না। সেখানে দলীয় নানা কর্মসূচি পালন করেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনীল সরকার সেখানে যান। তিনি দলের বাইরে গিয়ে দলের প্রার্থীর বিরোধিতাকারীদের আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশ নেন। রাজশাহীর পাঁচজন এমপি সিটি হাট এলাকার ওই কার্যালয়ে যান না।

এ ছাড়া উপজেলাগুলোতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতাকারীদের নেতারা যেসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, সেখানে সরব উপস্থিতি থাকে অনীল সরকারের। ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিরোধ মিটছে না বলে মনে করছেন নেতারা।

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনীল সরকার জানান, সিটি হাটের অফিসে যেসব অনুষ্ঠান করা হয়, সেখানে কেন্দ্রের কয়েকজন নেতাও থাকেন। তারা থাকায়, তিনিও থাকতে বাধ্য হন। এনিয়ে দলে বিভক্তি নেই বলে দাবি তার।

মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল। দল থেকে দায়িত্ব দেওয়ার পর সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে সঙ্গে নিয়ে রিকশায় করে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যেতে দেখা গেছে তাদের। যা নিয়ে আলোচনা ছিল নগরজুড়ে। কিন্তু হঠাৎ করেই মোহাম্মদ আলী কামাল বিরুদ্ধে চলে যান ডাবলু সরকারের। ডাবলু সরকারের ডাকা দলীয় সভা এক দিনের ব্যবধানে বাতিল করে দেন মোহাম্মদ আলী কামাল। এরপর নানা কর্মসূচি ও সভা হলেও তাতে থাকতে দেওয়া হয় না ডাবলু সরকারকে। এক সপ্তাহ আগে দলের বর্ধিত সভা করা হয়েছে। সেখানেও রাখা হয়নি ডাবলু সরকারকে।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, তাকে যে কারণে দলীয় কর্মসূচি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, সেটি নিয়ে আলোচনা করতে সভাপতির অনুমতি নিয়ে তিনি সভা আহ্বান করেছিলেন। সকালে আহ্বান করা সভা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সন্ধ্যায় বাতিল করে দেন। এরপর থেকে সভাপতি তার ইচ্ছেমতো সভা ও কর্মসূচি করছেন। দলীয় কার্যালয় ছেড়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কর্মসূচি পালন করছেন। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ‘মাথা বিক্রি’ করে দেওয়ার কারণেই দলের মধ্যে এই বিভক্তি।

ডাবলু সরকার বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চাইলে দলের ভিতরে যেসব ভুল বোঝাবুঝি আছে সেগুলো মিটিয়ে ফেলা যেত। কিন্তু তিনি কারও ইশারায় সেটি করছেন না। এখন কর্মসূচিতে লোকজন আসছে না। সামনে নির্বাচন। দলের কর্মীদের কাছে কী বার্তা যাচ্ছে?’

নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, দলের সব নেতা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। তিনি কারও ইশারায় কিছু করছেন না বলে দাবি করেন।

সর্বশেষ খবর