রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

এক বৃষ্টিতে ভয়ংকর রূপ চট্টগ্রামে

সেই ১০ স্পটে হাঁটু আর কোমরপানি

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

টানা দুই দিনের থেমে থেমে বৃষ্টিতে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা। গত দুই দিনে জোয়ারের পানি আর বৃষ্টির পানি মিশে তলিয়ে গেছে নগরের অধিকাংশ এলাকা। দিনে বৃষ্টি কম হলেও রাতের বৃষ্টিতে ডুবে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় যে ১০টি স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে, তাতে কোথাও কোমরপানি আবার কোথাও হাঁটুপানি। এতে দুর্ভোগের শেষ নেই নগরবাসীর। এ ছাড়া বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিচু এলাকায় বাড়তে থাকে জোয়ারের পানি। আর এতে কোমরপানিতে পরিণত হয় নিম্নাঞ্চলগুলো। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা আগেই বলেছিলেন, নগরীর ১০টি এলাকায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে।

চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পরিচালক ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, ‘বৃষ্টির পানির চেয়ে জোয়ারের পানির কারণে নগরবাসীর ভোগান্তি বেড়েছে। এখন পূর্ণিমার জোয়ার চলছে। এ জোয়ারে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় ৪ ফুটের মতো পানি বেড়েছে। ফলে চাক্তাই খাল, রাজাখালীসহ যে খালগুলোতে সিডিএ স্লুইস গেটের কাজ করছে, তা যদি বাস্তবায়ন হতো তাহলে এ সমস্যা হতো না। আমাদের প্রকল্পের আওতায় খাল পরিষ্কার আছে, খালে পানি চলাচল করছে। তবে সিডিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইস গেটগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলে বাকলিয়া, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো না। আমাদের প্রকল্পের আওতায় ৫টি স্লুইস গেট ছিল, যার সুফল এখন মহেশখালের মাধ্যমে নগরের আগ্রাবাদ, হালিশহর এলাকাসহ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা পাচ্ছেন। সেখানে কোনো ধরনের জলাবদ্ধতা হয়নি। পানি থাকলেও তা খালে যাওয়ার জন্য যে সময় দরকার সে সময় পর্যন্ত ছিল।’

সরেজমিন দেখা গেছে, টানা বৃষ্টিতে নগরীর চাক্তাই ডাইভারশন খাল-সংলগ্ন ফুলতলা বাজার, রসুলবাগ আবাসিক এলাকা, বাকলিয়া একসেস রোডের সৈয়দ শাহ ওয়াপদা অফিস, মিয়াখান নগরের ইসহাক সওদাগরের পোল, তক্তার পোলের আশপাশ এলাকায় হাঁটুপানিতে চলাচল করছেন নগরবাসী। আবার হিজড়া খাল-সংলগ্ন কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, বাদুড়তলা, পাঁচলাইশ, রাহাত্তারপুল এলাকার কোথাও কোমরপানি আবার কোথাও হাঁটুপানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া বহদ্দারহাট, তিনপুলের মাথাসহ নিম্নাঞ্চলে পানিতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। নালা ও ড্রেন পরিষ্কার না থাকায় সড়ক ও অলিগলি থেকে পানি খালে যেতে সময় লেগেছে। ফলে নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকায় দোকান-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে সড়কের ওপর বৃষ্টির পানির সঙ্গে জোয়ারের নোংরা পানি যোগ হয়েছে। সেই নোংরা পানি ডিঙিয়ে যাতায়াত করছে সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া নগরীর খোলা ডাস্টবিনের ময়লা জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে মানুষের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেছে। এদিকে টানা দ্বিতীয় দিনেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে ছিল হাঁটুপানি। নগরের বহদ্দারহাট এলাকার বহদ্দারবাড়িতে রেজাউল করিম চৌধুরীর নিজ বাসভবনে বন্দি হয়ে পড়েন। পরে রিকশায় করে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে দিনের কর্ম সম্পাদন করেন। রিকশায় করে যাওয়ার সময় মেয়র গণমাধ্যমকে বলেন, নগরের জলাবদ্ধতার জন্য নগরবাসী সিটি করপোরেশনকে গালাগাল করছে। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কোনো হাত নেই। আমিও বলেছি আমাদের কাউন্সিলরদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার জন্য। কিন্তু সিডিএ তাদের মতো করে কাজ করছে। নগরীর বাকলিয়ার বাসিন্দা আবদুল গফুর বলেন, সৈয়দ শাহ রোড, ওয়াপদায় আগে সেভাবে পানি উঠত না। এখন বৃষ্টি এলেই পানি জমে থাকে। এ ছাড়া খাল ও নালার সংস্কার কাজ চলার কারণে পানি চলাচল করতে পারছে না, যার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি জমে থাকে। পানিতে দুর্গন্ধ আর ময়লা আবর্জনায় ভরা। এ পানিতে হেঁটে যে বাইরে যাব সে অবস্থাও নেই। এই পানিতে হাঁটলেই পা চুলকানো শুরু করে।

অন্যদিকে টানা বর্ষণে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের নিচু এলাকায়ও পানি প্রবেশ করেছে। এতে কয়েক শতাধিক দোকান ও গোডাউন পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া চাক্তাই এলাকার নয়া মসজিদ, রাজাখালী, বউবাজার এলাকার কোথাও হাঁটু পরিমাণ, আবার কোথাও কোমরসমান পানিতে ডুবে আছে। এসব এলাকায় অনেক দোকান ও গুদামে পানি ঢুকেছে। চাক্তাই ছাড়াও আসাদগঞ্জের মসজিদ গলি, কলাবাগিচা এলাকা পানিতে থই থই করছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাক্তাইখাল থেকে প্রয়োজনীয় মাটি দ্রুত উত্তোলন করতে হবে। একই সঙ্গে চাক্তাইখালের মুখে নির্মিত স্লুইস গেটগুলো যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নতুবা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে না।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএর ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় শেষ হয় ২০২০ সালের জুন মাসে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন ও ব্যয় বাড়িয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে এখনো সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন মেলেনি। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর