বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

বারবার কেন ডোবে বরিশাল

রাহাত খান, বরিশাল

বারবার কেন ডোবে বরিশাল

বরিশাল নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কীর্তনখোলা নদী। নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লে বিভিন্ন খাল হয়ে নগরীতে প্রবেশ করত। আবার ভাটির সময় পানি নেমে যেত। জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হতো না। একইভাবে ভারী এবং অতিভারী বৃষ্টি হলেও ড্রেন-খাল হয়ে পানি নেমে যেত কীর্তনখোলায়। উচ্চ জোয়ার কিংবা ভারী বৃষ্টিতেও তেমন জলাবদ্ধতায় পড়তে হয়নি নগরবাসীকে। আশির দশকের এই চিত্র পাল্টে গেছে। বর্তমানে নগরের প্রবাহমান ২৪টি খাল ভরাট, অবৈধ দখল এবং দূষণের কারণে এখন একটু ভারী বৃষ্টি কিংবা জোয়ারের পানি বাড়লে জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। গত কয়েক দিন ধরে জোয়ারের সময় কীর্তনখোলা নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ছে আবার ভাটির সময় কমছে। জোয়ারের পানি মৃতপ্রায় খাল হয়ে নগরীতে প্রবেশ করলেও ভাটির সময় নামছে না। অন্যদিকে গত কয়েক দিনের অবিরাম ভারী বৃষ্টির পানি জমে আছে সর্বত্র। নগরীর বেশির ভাগ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। অলিগলি সড়ক তলিয়ে বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়েছে পানি। ‘এক সময়ে যে শহরে জলাবদ্ধতা হতো না, এখন সেখানে কেন জলাবদ্ধতা হয়’- এমন প্রশ্নে বরিশাল নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবুল বলেন, নগরীর ২৪টি খাল প্রবাহমান ছিল। কাঁচা হলেও ড্রেনগুলো ছিল প্রশস্ত। বটতলা খাল, ভাটারখাল, শোভারানীর খাল, বগুড়া রোড খাল, হাসপাতাল রোড খাল ভরাট করে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। জেলখাল, সাগরদী খাল, নথুল্লাবাদ খাল, পলাশপুর খালসহ সবগুলোর দুই পাশ অবৈধ দখলের গ্রাসে সংকুচিত হয়ে গেছে। এ ছাড়া ময়লা-আবর্জনা ফেলে খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। বর্তমান ড্রেনগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। ভারী বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি কিংবা নদীর জোয়ারের পানি শহরে প্রবেশ করলেও খাল-ড্রেনগুলোতে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকায় নামতে পারছে না। ৮৮ সালের পর এই বরিশাল শহরের কোনো খাল পুনর্খনন করা হয়নি, বরং দিন দিন সরকারি-বেসরকারি দখলে খালগুলো সংকুচিত করা হয়েছে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং বর্তমানে একটি বিদেশি সংস্থার পরামর্শক মো. তারিকুল হক তার যৌবন বয়সের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ৮০-এর দশকেও আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে অতিভারী বৃষ্টি হতো। সাময়িক পানি জমত। জোয়ারে নদীর পানি বাড়লে নগরীতে শহরে প্রবেশ করত। ভাটির সময় পানি নেমে যেত। জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হতো না। তখন শহরের ২৪টি খাল প্রবাহমান ছিল। ওই খালগুলো দিয়ে দ্রুত পানি কীর্তনখোলা নদীতে নেমে যেত। জলাবদ্ধতায় শহরবাসীকে নাকাল হতে হতো না।’ খালগুলো পুনর্খননের বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বাশার বলেন, ‘বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরীর সব খাল পুনরুদ্ধার, পুনর্খনন ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। মন্ত্রণালয় প্রকল্প সংশোধন করে দিতে বলেছে। এখন খাল খননের ছোট ছোট প্রকল্প করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর