শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

জলাবদ্ধতার দায় কার

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

জলাবদ্ধতার দায় কার

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রধান সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। তবে বর্তমানে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। চসিকের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং সিডিএর চেয়ারম্যান নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ। কিন্তু স্মরণকালের রেকর্ড জলাবদ্ধতায় গত পাঁচ দিন ধরে নগরের অধিকাংশ এলাকা যখন পানির নিচে, তখন সরকারি দলের দুই নেতা পরস্পরকে দোষারোপের রাজনীতি চর্চা চলছে। একই সংগঠনের দুই নেতা নাগরিক ভোগান্তি নিয়ে দোষারোপের রাজনীতি চর্চায় নগরবাসীর মধ্যে বিস্ময় দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জলাবদ্ধতা নিরসনে চসিক-সিডিএর সমন্বয় চেয়ে বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চসিক ও সিডিএ একে অপরের প্রতি দোষারোপ না করে যেন সমন্বয় করে কাজ করে। এর সুফল যাতে জনগণ খুব শিগগিরই পায়। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি সুরক্ষিত হবে।’ তবে নগরবাসী বলছে, অন্তহীন দুর্ভোগ-ভোগান্তির জলাবদ্ধতা নিয়ে কেন রাজনীতি। রুটিন করে প্রতি বছরই একই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই দেশে পদ্মা সেতুর মতো ব্রিজ করা গেলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা কেন নিরসন করা যাচ্ছে না। এটি হাস্যকর। এর জন্য দরকার সমন্বয়, নাগরিকদের প্রতি দায়বদ্ধতা ও নিজের কাজের প্রতি আন্তরিকতা। জানা যায়, গত ৫ আগস্ট চসিক মেয়র গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে বলেন, ‘নগরে জলাবদ্ধতা এবং মানুষের ভোগান্তির জন্য সিডিএ দায়ী। সিডিএ বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যোগ্য নয়। তাছাড়া, জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজে তারা চসিকের সঙ্গে সমন্বয় করছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করেন সিডিএ চেয়ারম্যান। তিনি দাবি করেন, ‘চসিক অযোগ্য প্রতিষ্ঠান। তাই সরকার জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ চসিককে না দিয়ে সিডিএকে দিয়েছে।’ সংবাদ সম্মেলনে সিডিএ চেয়ারম্যান মেয়রের বক্তব্য মিথ্যা দাবি করে বলেন, ‘সিডিএ জলাবদ্ধতার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, বাকি সব কাজ চসিকের। মূলত চসিক জলাবদ্ধতার কাজ করতে না পারায় সিডিএকে মেগা প্রকল্প দেওয়া হয়। মেয়র সাহেব ভুল তথ্য দিয়ে সিডিএকে দোষারোপ করছেন।’ এরপরই চসিক মেয়র আবার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, দোষারোপের রাজনীতি আমি বিশ্বাস করি না। তবে নগরবাসীর স্বার্থে কথা বলতে হয়, তাই বলছি। সিডিএ বলছে, খাল খনন করছে, তাহলে মাটিগুলো কই। আপনারা খালগুলো দেখে আসেন। আমার কথার যদি যথার্থতা না পান তখন বলবেন, আপনি মিথ্যা বলেছেন ও আরেকজনকে দোষারোপ করছেন। প্রকল্পের ডিপিপিতে ২০ কোটি কিউবেক মাটি উত্তোলনের কথা লেখা আছে। বাস্তবে কি সে পরিমাণ মাটি তুলেছে? মাটি উত্তোলন করা না হলে কি প্রকল্পের সাফল্য আসবে?

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোওয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, এখানে কাউকে দোষারোপ বা কাদা ছোড়াছুড়ির দরকার নেই। আমি বলব, মেগা প্রকল্পের বিষয়ে সিডিএর তখনকার প্রশাসনই দায়ী। সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক ভুল সিদ্ধান্ত। সিডিএর তখনকার সময়ে এত বড় প্রকল্প ম্যানেজ করার মতো সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও কাজটি কেন দেওয়া হয়। অথচ চসিকেরও একটা প্রকল্প ছিল। সেটিও বাস্তবায়ন করতে পারত। তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো খন্ডিত। ৩৬টি খাল সংস্কার করলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না। তৈরি করতে হবে জলাধার, সচল করতে হবে স্লুইসগেট। তাছাড়া চলমান কাজগুলো সম্পন্ন করা হয়নি। তাই ফলাফলও জিরো পার্সেন্ট।   জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নিয়ে অদৃশ্য দ্বন্দ্ব লেগে আছে গত চার বছর ধরে। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই কাজটি করে আসছে চসিক। কিন্তু ২০১৭ সালে সরকার মেগা প্রকল্প দেয় সিডিএকে। গুঞ্জন আছে, এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ আছে চসিকের। তাছাড়া, চসিক প্রকল্পটি না পাওয়াটা প্রেস্টিজ ইস্যু মনে করছে।

ফলে গত চার বছর ধরে জলাবদ্ধতা হলেই দুই সংস্থা পরস্পরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দেয়। কার্যত প্রধান দুই সেবা সংস্থার এমন বিপরীতমুখী মানসিকতার চরম খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর