শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

শিক্ষিকাকে ভয় দেখিয়ে চাঁদা, তালা অধ্যক্ষের কক্ষে

জাবি ও ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) এক শিক্ষিকাকে আটকের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। তবে অভিযুক্তদের দাবি, ওই শিক্ষিকা এ টাকা তাদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য দিয়েছেন। গত শুক্রবার বিকাল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়টির জিমনেসিয়াম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তরা হলেন- জাবির ৪৭ ব্যাচের লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী জয় পাল এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফুল হাসান মারুফ। জয় পাল শাখা ছাত্রলীগের উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক এবং মারুফ ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত। তারা উভয়ে আল-বেরুনী

হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, ওইদিন জাবির জিমনেসিয়াম এলাকায় বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে যান ভুক্তভোগী শিক্ষিকা। এ সময়, অভিযুক্তরা তাদের বহিরাগত আখ্যা দিয়ে আটকের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন। পরবর্তীতে ওই শিক্ষিকা জাবির বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুমতাহানা মৌকে ঘটনাটি জানান। মুমতাহানা মৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া স্বাধীনের সহায়তায় অভিযুক্তদের শনাক্ত করলে অভিযুক্তরা বাংলা বিভাগে গিয়ে ক্ষমা চান এবং আদায় করা টাকা বিকাশের মাধ্যমে ফেরত দেন। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর বরাবর মৌখিক অভিযোগ করে এসেছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এ বিষয়ে অভিযুক্ত জয় পাল বলেন, এখানে জোর করে টাকা আদায়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আমাদের মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা দেন। তারপরও আমরা ভুল বুঝতে পেরে বিকাশের মাধ্যমে টাকা ফেরত দিয়েছি এবং বিভাগের শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জাবির প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ঘটনাটি জানার পর ওই শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি সম্পর্কে উপাচার্য অবগত আছেন। এ ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাঁদা না দেওয়ায় অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিল ছাত্রলীগ : ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে চাঁদার দাবিতে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ৮০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় শিক্ষকদের লাঞ্ছনা ও অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন কলেজের নিরাপত্তা কমিটির আহ্বায়ক ‘ট্রিপল-ই’ বিভাগের শিক্ষক সবুজ আহমেদ। জানা যায়, সম্প্রতি ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অমর একুশে হল, মুক্তিযোদ্ধা হল ও মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি হলের কমিটি গঠন করে শাখা ছাত্রলীগ। তিনটি হলের নবগঠিত কমিটিকে বরণ করতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজনের উদ্যোগ নেয় সংগঠনটি। ওই অনুষ্ঠানের খরচ বাবদ কলেজ অধ্যক্ষের কাছে ৮০ হাজার টাকা চেয়ে লিখিত আবেদন করে শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক। সেই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় শিক্ষকদের লাঞ্ছনা ও অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে বুধবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন কলেজের নিরাপত্তা কমিটির আহ্বায়ক। যদিও গভীর রাতে সেই তালা খুলে দেওয়া হয়। তবে চাঁদা না পেয়ে গতকাল অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ও তাকে সরকারবিরোধী আখ্যা দিয়ে তার অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। জানা গেছে, ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সাবেক ছাত্র প্রসেনজিৎ বড়ুয়া বর্তমানে কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক এবং যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তৌহিদুল ইসলাম আশরাফী অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে ৬ আগস্ট ৮০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অনীহা জানালে প্রসেনজিৎ অধ্যক্ষ মো. আলমগীর হোসাইনকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। একপর্যায়ে কক্ষের দরজা বন্ধ করে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করেন। সে সময় অধ্যক্ষের অফিস কক্ষে উপস্থিত ট্রিপল-ই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম আনোয়ারুল হক ও রসায়নের সহকারী অধ্যাপক মো. খলিলুর রহমান তাদের থামানোর চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গেও অশালীন আচরণ করা হয় এবং চাঁদা না দিলে ভবিষ্যতে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। বুধবার ফের অধ্যক্ষকে টাকার জন্য ফোন করে গালাগাল করে তৌহিদ। পরে বিকাল ৩টার দিকে অধ্যক্ষের অফিসকক্ষে গিয়ে অধ্যক্ষকে না পেয়ে তালা দিয়ে চলে আসেন। কলেজের নিরাপত্তা কমিটির আহ্বায়ক ইইই বিভাগের শিক্ষক সবুজ আহমেদ বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন। এ খবর পেয়ে গভীর রাতে সেই তালা খুলে দেয়। অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দেওয়ার কথা অস্বীকার করে যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তৌহিদুল ইসলাম আশরাফী বলেন, ১৫ আগস্ট প্রোগ্রামের জন্য গেলে অধ্যক্ষ কোনো সহযোগিতা করেনি। অধ্যক্ষ সরকারবিরোধী একজন লোক। এসব নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে কক্ষে তালা দেইনি। কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলমগীর হোসাইন বলেন, ১৫ আগস্ট নয়, নিজস্ব অনুষ্ঠানের জন্য দুজন সাবেক ছাত্র এসে লিখিতভাবে ৮০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দেওয়ার এখতিয়ার নেই জানালে আমার সঙ্গে চিৎকার-চেঁচামেচি করে নানা হুমকি দেয়। এরপর আমার কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর