শিরোনাম
রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

পানির স্রোতে দেবে যায় লাইন সরে যায় মাটি-পাথর

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন রেললাইনটি গেছে চন্দনাইশ-সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার বিস্তৃত এলাকা দিয়ে। টানা বর্ষণে তলিয়ে যায় এ তিন উপজেলা। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া উপজেলার ৪০০ মিটার রেললাইন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে সাতকানিয়ার কেউচিয়া ইউনিয়নের তেমুহনি এলাকার লাইনটি দেবে যায়। বেঁকে যায় আরও কয়েকটি অংশ। তবে বন্যার কারণে সেপ্টেম্বরে পরীক্ষামূলক রেল চলাচল নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এক মাসে সংস্কার কাজ শেষ করা সম্ভব। জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮৮ শতাংশ। জানা যায়, ৪ থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত প্রবল বর্ষণ, জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলা। সোমবার সন্ধ্যা থেকে বাড়তে শুরু করে পানি। মঙ্গলবার ভোরেই রেললাইন তলিয়ে যায় পানিতে। বৃহস্পতিবার থেকে নামতে শুরু করে পানি। পানির নিচে থাকায় উঁচু-নিচু ও বেঁকে যায় রেললাইন। লাইন থেকে সরে যায় মাটি ও পাথর। লাইনের নিচে নালার মতো হয়ে পানিও চলাচল করছে। বিশেষ করে সাতকানিয়ার কেওচিয়ার তেমুহনী এলাকার চার-পাঁচটি স্থানে দেবে যায় রেললাইন। কোনো কোনো স্থানে ১ ফুট পর্যন্ত দেবে যায়। পাথর ও মাটি সরে যাওয়ায় রেললাইনের স্পিøন্টারগুলো ভাসছিল শূন্যে। লাইনের নিচের গর্তে জমে আছে পানি। কোথাও রেললাইন থাকলেও নিচে নেই পাথর। গতকালও রেললাইনের দুই পাশ পানিতে ডোবা ছিল। বৃহস্পতিবার রেলওয়ের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন প্রকল্প পরিদর্শন করেন। তবে বন্যার পানিতে রেললাইনের মোট ক্ষতি এবং সংস্কারে কত অর্থ ব্যয় হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। স্থানীয়রা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অংশ দিয়ে বান্দরবানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি নেমে সাঙ্গু ও ডলু খালে গিয়ে পড়ে। কিন্তু অতি বর্ষণের পানি রেললাইনে বাধাগ্রস্ত হয়। সাতকানিয়ার চরতি ইউনিয়নের বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, ‘অতীতেও প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল ছিল। কিন্তু এবারের মতো হয়নি। এ ছাড়া দেবে যাওয়া রেললাইন এলাকা দিয়ে বান্দরবানের পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হয়ে নদীতে পড়ে। কিন্তু এবার পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।’

কক্সবাজার-দোহাজারি রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান বলেন, রেললাইনের ৪০০ মিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন অংশে কিছু মাটি ও পাথর সরে গেছে। পানি কমলে এগুলো সংস্কার করা হবে। কিন্তু মোট কতটুকু পরিমাণ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তা মেরামতে কত ব্যয় হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। তবে যথাসময়ে রেল চলাচল শুরু হবে।

তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সমীক্ষা, যাচাই-বাচাই ও পর্যবেক্ষণ করেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু হয়। তাই বন্যা, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের বিষয়টি বিবেচনায় ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রায় ২০ ফুট উঁচুতে রেললাইন করা হয়। কিন্তু এবার বৃষ্টির তীব্রতা অনেক বেশি ছিল বলে লাইনের ওপর পানি উঠে যায়।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ‘দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি ঘুনধুুুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ শীর্ষক ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুনধুম পর্যন্ত মিটার গেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার ও রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিমি রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক স্থাপনের কাজ চলছে। প্রকল্পের অধীনে কক্সবাজারে নির্মিত হচ্ছে ঝিনুকের আদলে দেশের প্রথম অত্যাধুনিক আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। প্রকল্পের অধীন ১০০ কিলোমিটার রেললাইনে ১৪৫টি মাইনর কালভার্ট ও ৩৯টি মেজর ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর