বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

চাকরির নামে প্রতারিত হয়ে নিজেই বনে যান কাস্টমস কর্মকর্তা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাকরির নামে প্রতারণার শিকার হয়ে নজরুল ইসলাম নামে এক যুবক নিজেই বনে যান কাস্টমস কর্মকর্তা। তিনি গড়ে তোলেন প্রতারক চক্র। নজরুলকে তিন সহযোগীসহ গ্রেফতার ও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যমতে গতকাল র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান। এর আগে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব-১০ নজরুলসহ চারজনকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার, দুটি মোটরসাইকেলসহ বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- ওয়ায়েশ করোনী ওরফে সেলিম, নাসির উদ্দিন ও সৈয়দ মো. এনায়েত। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, কয়েকজন   ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে এই চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। চক্রটি প্রায় দুই বছর ধরে প্রতারণা করছিল। এ চক্রে তারা সাত-আটজন জড়িত। চক্রের অন্য সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার চাকরিপ্রত্যাশীদের অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তার কাছে নিয়ে আসত। নজরুল কাস্টমসের ইউনিফরম পরা অবস্থায় চাকরিপ্রত্যাশীদের বলত, কাস্টমসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। এভাবেই তারা চাকরিপ্রত্যাশীদের বিশ্বাস অর্জন করে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিত। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তারা গাড়িতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টিকার ব্যবহার করত। তারা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন রিসোর্ট ও ব্যবসায়ীদের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিত। বিদেশে পাঠানোর কথা বলেও অসংখ্য ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা।

খন্দকার আল মঈন বলেন, নজরুল স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে কাস্টমসে চাকরির আবেদন করে কয়েক প্রতারককে বিভিন্ন সময়ে অর্থ দিয়ে প্রতারিত হয়। ২০১২ সালে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি পেতে এক প্রতারককে ১১ লাখ টাকা দিলেও সে চাকরি পায়নি। ২০১৩ সালে নৈশপ্রহরী এবং ২০১৭ সালে উচ্চমান সহকারী পদে চাকরি পাওয়ার আশায় আবেদন করেও প্রতারিত হয়। বিভিন্ন সময়ে কাস্টমসে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এবং কর্মকর্তাদের সান্নিধ্যে আসার সুবাদে কাস্টমসের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সে ধারণা লাভ করে। এরপর সে একটি প্রতারক চক্র গড়ে তোলে। নজরুল এলাকায় নিজেকে ঊর্ধ্বতন কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিত। পরবর্তীতে কাস্টমসের পিওন, ঝাড়ুদার ও অন্যান্য পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে চার-পাঁচজনকে চাকরি দিয়ে বিশ্বস্ততা অর্জন করে অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করে সে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, নজরুল বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে দেশের বাইরে থেকে আসা স্বর্ণ ও মালামাল অর্থের বিনিময়ে ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিত। প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ দিয়ে সে ফ্ল্যাট বুকিং, জমি ও বাড়ি ক্রয়সহ বিপুল অর্থসম্পদ গড়ে তোলে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ১৭ ভুক্তভোগীর তথ্য পেয়েছি, যাদের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে নজরুল। সে এলাকায় ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ৪-৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর