শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

হর্ষবর্ধন শ্রিংলার নামে বাকেরগঞ্জে সড়ক

পাকসেনাদের ব্রাশফায়ারে হত্যার শিকার ৩৬০ জনের স্মরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

হর্ষবর্ধন শ্রিংলার নামে বাকেরগঞ্জে সড়ক

একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ১৪ নভেম্বর বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী বাজারে স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩৬০ জনকে একত্রে ব্রাশফায়ারে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। নির্মম এ হত্যার শিকারদের নামের তালিকা এখনো অমলিন সেখানে নির্মিত স্মৃতিফলকে। বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে এলাকাটি পরিদর্শন করেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। পরিদর্শনের স্মৃতি ধরে রাখতে এবং জঘন্য হত্যার শিকার সংখ্যালঘুদের প্রতি সম্মান জানাতে সেখানে নির্মিত একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে হর্ষবর্ধন শ্রিংলার নামে। বাকেরগঞ্জের কলসকাঠী ইউনিয়নের হিরাধর থেকে গান্ধী আশ্রম হয়ে সড়কটি গেছে সেই হত্যার স্থল কলসকাঠী বাজারে। হর্ষবর্ধনের নামে নামকরণ করা ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি নির্মিত হয়েছে সরকারি অর্থায়নে। সড়কটি নির্মাণ এবং হর্ষবর্ধনের নামে নামকরণের উদ্যোগ নেন জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং তার স্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য রতনা আমিন হাওলাদার। গত ৭ আগস্ট তারা দুজন যৌথভাবে হর্ষবর্ধনের নামখচিত নামফলক উন্মোচন করেন। সড়কটি শুধু সেদিনের নির্মমতার স্মৃতিই বহন করছে না, এটি ভারত-বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধুত্বেরও নিদর্শন। সরেজমিন দেখা গেছে, কলসকাঠী বাজারের কোল ঘেঁষেই রয়েছে একটি বহু পুরনো খাল। কলসকাঠীর বিভিন্ন স্থান থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩৬০ জনকে ধরে এনে এই খালের পাড়েই জড়ো করার পর হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে পাকবাহিনী। হত্যার পর লাশগুলো ফেলা হয়েছিল খালে। সেদিনের নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পরিমল চন্দ্র কুন্ড জানান, এতগুলো রক্তাক্ত লাশ ফেলার কারণে খালের পানি লাল হয়ে গিয়েছিল। তখনই স্থানীয়রা বলতেন, ‘কলসকাঠীর খাল, রক্তে লাল’। শহীদদের স্মরণে কলসকাঠীতে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের সামনে দাঁড়ালে এখনো গা শিউরে ওঠে। জানা গেছে, বাংলাদেশে হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কলসকাঠী বাজারে হত্যাকান্ড স্থল পরিদর্শন করেন এবং শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিনি শহীদ পরিবারগুলোর সদস্য-স্বজনদের সঙ্গেও কথা বলেন, সহমর্মিতা জানান। এরপর সড়কটি নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য রতনা আমিন হাওলাদার, তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন রুহুল আমিন হাওলাদার। হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সেদিন মহাত্মা গান্ধী আশ্রম, ঐতিহ্যবাহী রাজেস্বর রায় জমিদারবাড়ি এবং স্থানীয় রাধা জিউর মন্দিরও পরিদর্শন করেন। স্থানীয় শিশির ভৌমিক জানান, দেশ স্বাধীনের পর হর্ষবর্ধনই প্রথম কোনো বিদেশি, যিনি ঘটনাস্থলটি পরিদর্শন করেছেন, তার আন্তরিকতা এখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় চিরদিন স্মরণে রাখবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর