বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভর্তি জালিয়াতিতে রাবি ছাত্রলীগ নেতাসহ চার ছাত্র বহিষ্কার

মামলার ছয় মাসেও গ্রেফতার হয়নি মূলহোতা

রাবি প্রতিনিধি

ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতাসহ চার শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাদের বহিষ্কার করা হয়। তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র ও শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী মহিবুল মমিন সনেট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী শাকোয়ান সিদ্দিক প্রাঙ্গণ এবং সদ্য জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়া পপুলেশন সায়েন্সেস অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের ছাত্র আহসান হাবীব। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে রাবির ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায়ে ভর্তি সম্পন্ন এবং অর্থের বিনিময়ে অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির সহযোগিতার অভিযোগে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করার কথা আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে মামলার ছয় মাস হলেও অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাসময়ে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা জালিয়াতির পুনরাবৃত্তি ঘটছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। তাই জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা জানান তারা। একই সঙ্গে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম জানান, অভিযোগ পাওয়ায় রাষ্ট্রীয় আইনে তাদের নামে মামলা     হয়েছে। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অভিযুক্ত শাস্তির আওতায় আসুক। বিনা অপরাধে যেন কেউ ফেঁসে না যায়। কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে, অবশ্যই তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে। তাছাড়া তদন্ত যাতে দীর্ঘস্থায়ী না হয় সেদিকেও সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়ার কথা বলেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০ মে রাবির ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে সাতজন প্রক্সিদাতাকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক হাসিবুল ইসলাম শান্তকে আটক করে পুলিশ। তার কাছে জালিয়াতির বিভিন্ন উপকরণ পাওয়ার কথা জানান তারা। এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ভর্তিচ্ছু তানভীর আহমেদের পরিবর্তে প্রক্সি দেওয়ার অভিযোগে আটক হন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ছাত্র স্বপন হোসাইন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়ের কথায় এই জালিয়াতিতে অংশ নিয়েছেন তিনি। জালিয়াতির একাধিক মামলা রয়েছে ছাত্রলীগ কর্মী সনেটের বিরুদ্ধে। মামলায় জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ২০/২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার কথা উল্লেখ আছে। এ ছাড়াও গত বছর ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সিকাণ্ডে আটক বায়েজিদ জিজ্ঞাসাবাদে তন্ময়ের নাম সামনে আনেন। এই শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়ের বন্ধু। জালিয়াতির অভিযোগে তন্ময়ের নামে নগরীর ৩ থানায় ৬ মামলা রয়েছে।

জানতে চাইলে বোয়ালিয়া থানার জালিয়াতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সাইমন ইসলাম জানান, যে কোনো সময় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, দলের কেউ প্রত্যক্ষভাবে তাকে সাপোর্ট দিচ্ছে বলে মনে হয় না। তবে শোনা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রভাবশালী শিক্ষকের ছত্রছায়াই এসব কর্মকাণ্ড করছেন তন্ময়। সেই শিক্ষকের পেছনে বড় রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে।

মামলার সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি মেট্রোপলিটন উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আল মামুন। শুধু মামলার তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর