বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

চার প্রকল্পে ডুবছে চট্টগ্রাম

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চার প্রকল্পে ডুবছে চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনটি সংস্থা ১১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকার পৃথক চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তবু প্রতি বর্ষা মৌসুমে ডুবছে নগর। রুটিন করেই তিন দশক ধরে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার ধকল সইতে হচ্ছে। মুক্তি মিলছে না এ দুর্ভোগ ভোগান্তি থেকে। পোহাতে হচ্ছে অন্তহীন দুর্ভোগ। জানা যায়, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৭৭ শতাংশ।

মেগা প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, নগরের সবগুলো খাল, নালা-নর্দমা ও ড্রেন পানি চলাচলের জন্য উপযুক্ত করার আগ পর্যন্ত নগর জলাবদ্ধতামুক্ত হবে না। মেগা প্রকল্পের বাইরে থাকা উল্লেখযোগ্য কাজগুলো শেষ করতে হবে। এগুলো সম্পন্ন না করলে নগরে পানি জমবে। প্রকল্পের অধীন ২৫ খালের সংস্কারকাজ প্রায় শেষ। কিন্তু খাল পর্যন্ত পানিগুলো পৌঁছানোর ব্যবস্থা অপ্রতুল। এখন নালা-নর্দমা ও ড্রেনগুলো দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারছে না। এ ছাড়া সিডিএ ২ হাজার ৭৪৬ কোটি ৩৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল’ পর্যন্ত সাড়ে আট কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করছে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি তিন দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ বলেন, প্রকল্পটির কাজ এখন ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আট কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সাত কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ। বিশেষ করে প্রকল্পের অধীন চাক্তাই, রাজাখালী, নোয়াখালসহ চারটি রেগুলেটর ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে জরুরি ভিত্তিতে চালু করা হয়েছে। এগুলোর কারণে এসব এলাকায় এবার জলাবদ্ধতা কম হচ্ছে। রেগুলেটরগুলো পরিচালনায় অপারেটরও রাখা হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নগরের বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন একটি খাল খনন করতে ৩৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু চার দফা সংশোধনের পর প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি এখনো ভূমি অধিগ্রহণেই আটকে আছে। অথচ জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরে নতুন খাল খননের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ১৯৯৫ সালের মহাপরিকল্পনায়ও সুপারিশ করা হয়েছিল। চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল হুদা বলেন, প্রকল্পটি এখন ভূমি অধিগ্রহণ পর্যায়ে। তিন ভাগের দুই ভাগ অধিগ্রহণ কাজ শেষ হয়েছে। অধিগ্রহণ কাজ শেষ হওয়ার পরই খনন কাজ শুরু করা হবে।  ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ‘চট্টগ্রাম মহানগরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন উন্নয়ন’ শীর্ষক ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শহীদ বলেন, প্রকল্পের অধীন কাজগুলো চলছে। এর মধ্যে ২ দশমিক ৭ কিমি সড়ক নির্মাণ ও ২৩টি রেগুলেটর নির্মাণ শেষ হয় এবং চারটি রেগুলেটরের কাজ চলমান। কাজের অগ্রগতি ২৫ শতাংশ। প্রকল্পের কাজ ২০২৪ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা। তবে তা শেষ করতে ২০২৭ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন নয়, জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধ এবং কর্ণফুলী নদী থেকে জোয়ারের পানি ঠেকানো হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর