শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

শিক্ষার্থী ঝরে পড়া বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

শিক্ষার্থী ঝরে পড়া বাড়ছে

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার মোট শিক্ষার্থীর চার ভাগের এক ভাগ। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের দেওয়া তথ্যে এমনটাই জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ শিক্ষা ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ স্কুল-কলেজের চেয়ে কোচিং সেন্টার-নির্ভরতা।

শিক্ষা বোর্ডের দেওয়া তথ্য মতে, এবার শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরমপূরণ করেছিলেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৬০ জন। এর মধ্যে নিয়মিত শিক্ষার্থী ১ লাখ ২০ হাজার ৯৭২ জন। তবে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৯২ জন। এই একটি হিসাবে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ২৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। ২০২২ সালে এ হার ছিল ১৯ দশমিক ৫০ এবং ২০২১ সালে ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। বোর্ডে ২০২৩ সালের এসএসসিতে নিয়মিত শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ছিল ১৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০২২ সালে ১৩ দশমিক ৮২ ও ২০২১ সালে ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষার্থীর বাবা নয়ন বিশ্বাস জানান, তার সন্তান বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। কোচিং ও টিউশন ফি হিসেবে বছরপ্রতি ব্যয় হয়েছে দেড় লাখ টাকার ওপর। এ ছাড়া পরীক্ষার তিন মাস আগে স্পেশাল কোচিংয়ের জন্য গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত আরও ২৫ হাজার টাকা। পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই আবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য কোচিংয়ে গুনতে হবে আরও ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুলের এক শিক্ষার্থীর বাবা জাবীদ অপু জানান, তার এক সন্তান ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। এখন প্রতি মাসে তার শুধু কোচিং ও টিউশন ফি বাবদ ব্যয় হয় ১২ হাজার টাকা। তার আরেক সন্তান পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। তার পেছনেও কোচিং ও প্রাইভেট সেন্টার বাবদ ব্যয় প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা।

অভিভাবকরা জানান, এখন অষ্টম শ্রেণি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগ পর্যন্ত একজন সন্তানের পেছনে প্রতি বছর গড়ে প্রায় পৌনে ২ লাখ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এ টাকার পুরোটাই যায় কোচিং ও টিউশন সেন্টারে। এর বাইরে আছে যাতায়াত ব্যয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও ফরমপূরণ ফি। স্কুল বা কলেজে পড়ালেখা না হওয়ায় সন্তানদের কোচিং বা টিউশন সেন্টারে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুল ইসলাম বলেন, এসএসসি ও এইচএসসিতে রেজিস্ট্রেশন করে অনেকেই। ফরমপূরণ করানোর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। রেজিস্ট্রেশনের পরও কেন শিক্ষার্থীরা ফরম ফিলআপ করছে না; তা খতিয়ে দেখতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হবে। তারা এর উত্তর দিলে আমরা জানতে পারব শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার কারণ। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীদের ব্যয় কমে আসবে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, এটা ঠিক; শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে যে ব্যয় হচ্ছে তা চালানোর মতো সামর্থ্য অনেকের নেই। এ ছাড়া সন্তানকে নিয়ে সারা দিন একজন অভিভাবক বিশেষ করে একজন মা কোচিং ও টিউশন সেন্টারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন হলে এটার প্রয়োজন হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ও শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা নতুন একটা কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে চাই। যার মাধ্যমে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর