সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

দালাল চক্রে জিম্মি স্বাস্থ্যসেবা

খুমেক হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযান, ১১ দালালকে জেল-জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

গলায় টিউমার ও পেটে প্রচন্ড ব্যথায় অসুস্থ নাসিমা বেগমকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে আনা হয় বৃহস্পতিবার দুপুরে। তখনই আশপাশে ঘোরাঘুরি করা কয়েকজন জানায়, সপ্তাহের শেষ দিনে বড় স্যার (চিকিৎসক) হাসপাতালে বেশিক্ষণ থাকেন না। দ্রুত রিপোর্ট না করলে তাকে দেখানো যাবে না। তারাই দ্রুত এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ আরও কিছু রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যায় হাসপাতালের সামনের উদয়ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলে সাড়ে ৫ হাজার টাকা নেয়। যা সরকারি হাসপাতালে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় করানো যায়। নাসিমা বেগমের স্বামী মনিরুল ইসলাম জানান, বাড়তি টাকা নেওয়ার পরও রিপোর্ট না দিয়ে তাদের দুই দিন ঘোরানো হয়। ফলে তার স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

জানা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ঘিরে বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালের দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকরাও জড়িয়ে পড়েছেন বেসরকারি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে কমিশন বাণিজ্যে।

দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে ‘দ্রুত ও ভালো মানের পরীক্ষার’ প্রলোভনে সাধারণ রোগীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও কমিশনের মাধ্যমে রোগীদের ওই সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়া হয়। অধিক টাকার বিনিময়ে সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগীদের।

এদিকে গতকাল খুমেক হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানে ১১ জন দালাল ও আউটসোর্সিং কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়। হাসপাতালের অভ্যন্তরের বিভিন্ন ওয়ার্ড জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ থেকে তাদের আটক করে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে জড়ো করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বেসরকারি সন্ধানী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দুই কর্মচারী অনুমতি ছাড়াই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে রোগীর রক্ত সংগ্রহ করেছেন। তাদের ডায়াগনস্টিক রিপোর্টের জন্য হাসপাতাল থেকেই ফোন করেছিলেন কমিশনপ্রাপ্ত ওয়ার্ড বয়। এর বাইরে বেশ কয়েকজন আউটসোর্সিং কর্মচারী রয়েছেন যাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে কমিশনের বিনিময়ে হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম দালাল চক্রের দুজনকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ১ হাজার টাকা জরিমানা; অনাদায়ে আরও পাঁচ দিনের কারাদন্ড এবং বাকি নয়জনকে ১ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। ১৫ দিনের জেল ও ১ হাজার টাকা জারিমানার দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জ্যোতির্ময় শীল ও লিটন মন্ডল। জরিমানা দন্ডপ্রাপ্ত নয়জন হচ্ছেন- শিফাজুর রহমান, মো. রিয়াজুল ইসলাম, ফিরোজা খাতুন, ফারুক হোসেন, ওসমান শেখ, রিয়া বেগম, আরাফাত আকুঞ্জি, আবদুল্লাহ আল মামুন ও গোলম রাব্বানী।

র‌্যাব-৬’র কোম্পানি কমান্ডার মো. বদরুদ্দোজা বলেন, সাধারণ রোগীদের কথা মাথায় রেখে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সব সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো দালালমুক্ত করতে চাই। এর জন্য আগামীতেও আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর