মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

উত্তরের ১০ হাজার মিল চাতাল বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

উত্তরের ১০ হাজার মিল চাতাল বন্ধ

অটো রাইস মিলগুলোর দাপটে ধানের অভাবে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার মিল চাতাল অতীত হতে বসেছে। একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এসব মিল চাতাল। অটো রাইস মিলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারা, উৎপাদন খরচ বেশি, লেবার সংকট, খাদ্য বিভাগের অটো রাইসমিল থেকে ধান-চাল সংগ্রহসহ নানা কারণে বন্ধ হয়েছে এসব মিল চাতালগুলো। হাতে গোনা দু-একটি মিল চাতাল খোলা থাকলেও সেগুলো থেকে উৎপাদিত চাল এক  শ্রেণির ফড়িয়ার মাধ্যমে চলে যাচ্ছে অটো রাইসমিলে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরের মাহিগঞ্জ, দিনাজপুরের পুলহাট, বগুড়া, নওগাঁ ও রাজশাহী থেকে প্রতিদিন শত শত  ট্রাক চাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেত। চাল ব্যবসাকে ঘিরে এসব এলাকায় গড়ে উঠে হাজার হাজার মিল চাতাল। ক’বছর আগেও শত শত মানুষের হাক ডাকে মুখর থাকত মিল চাতাল এলাকা। এখন ধানের অভাবে মিল চাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক স্থানকে মনে হয় মৃত শহর। বন্ধ হয়ে যাওয়া চাতাল মালিকরা জানান, ধানের অভাবে তারা ইতোমধ্যেই চাতালের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে ভিন্ন পেশায় গিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার কথা ভাবছেন। তারা জানান, পুরো উত্তরাঞ্চলে হাতে গোনা  ৩০০ থেকে ৪০০ জন বড় ব্যবসায়ী ও অটো রাইসমিল মালিক ধান চালের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। বড় ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বাধ্য হয়ে তারা তাদের মিল চাতাল বন্ধ করে দিয়েছে। তারা আরও জানান, অটো রাইস মিল মালিক ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা ধানের জন্য আগাম ব্যাপারিদের টাকা দিয়ে রাখে। ফলে ব্যাপারিরা ছোটখাটো মিল চাতালগুলোর কাছে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ প্রকাশ করে না। খাদ্য অধিদফতর থেকে মিল চাতালগুলো থেকে ধান-চাল ক্রয় না করে অটো রাইসমিলগুলো থেকে ক্রয় করছে। ফলে মিল-চাতালগুলো ধান বিক্রি করতে পারে না। যদিও বা দু’একজন বরাদ্দ পায় তাদের চালও অটো রাইস মিলে নিয়ে গিয়ে নতুন করে পরিশোধিত করতে হয়। এছাড়া উৎপাদন খরচও কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় অটো রাইসমিলগুলোর সাথে তারা প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারছে না।  এ ছাড়া লেবার সংকটও প্রকট।

রংপুর ধান চাতাল মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাসেম মিল চাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে অটো রাইস মিলগুলোর মজুদের পাহাড় গড়ে তোলাকে দায়ী করে জানান, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহী পাবনা, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জে হাতেগোনা কয়েকজন লাখ লাখ মণ ধান মজুদ রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। কারসাজি করে তারা ধান চালের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া খাদ্য বিভাগ মিল চাতালগুলো থেকে ধান-চাল কিনছে না। খাদ্য বিভাগ অটো রাইসমিলগুলো থেকে ধানচাল কেনায় মিল চাতাল মালিকরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে কমপক্ষে ১০ হাজার মিল-চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে বলে তিনি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর