বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে বরাদ্দ আছে, সুফল নেই

চটেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা, সমন্বয়ে আলাদা কমিটির তাগিদ

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও প্রকৃত সুফল কতটুকু মিলছে তা নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে সন্দেহের দানা বেঁধেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য তিন প্রকল্পে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পরও এখনো সুফল না মেলায় চটেছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা ও এমপিরা। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের নেতাদের।

চলতি মাসের শুরুতে ব্যাপক বৃষ্টিতে প্রায় সপ্তাহ খানেক জলমগ্ন ছিল বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ একটি বিবৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া চসিকের সাধারণ সভায়ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত একাধিক কাউন্সিলর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী অন্য সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, নগর আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে দুর্ভোগের জন্য নগরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে জলাবদ্ধতা নিরসনের তিনটি প্রকল্পসহ চট্টগ্রামের সব মেগাপ্রজেক্ট দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক। নগরবাসীর দুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে নগর আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দোষারোপের সংস্কৃতি বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব মেগা প্রকল্প নিয়েছেন, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন চায় নগর আওয়ামী লীগ। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করা গেলে জনগণ সুফল পাবে। প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি সুরক্ষিত হবে।’ এদিকে গত সোমবার চসিকের ৩১তম সাধারণ সভায় জলাবদ্ধতাসহ নগরীর অন্যান্য প্রকল্পগুলো নিয়ে একাধিক কাউন্সিলর চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও প্রকৃত সুফল মিলছে না। সিডিএ, ওয়াসাসহ অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি সংস্থাগুলো যাচ্ছেতাই ভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ফলে এত টাকা বরাদ্দের পরও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হচ্ছে না। সভায় চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ইতোমধ্যে খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু সুফল এসেছে বলে নগরবাসী মনে করে না। আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে কর্ণফুলী টানেলসহ, ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণসহ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীর বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়ছে। এসব প্রকল্পের সুফল তুলে আনতে সব সংস্থার সমন্বয় দরকার। সব প্রকল্পের সুফল তুলে আনতে না পারলে স্মার্ট চট্টগ্রাম গড়ে তোলার ভিশন কঠিন হয়ে যাবে। এদিকে চসিক মেয়র, কাউন্সিলর ছাড়াও নগর আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা, একাধিক এমপিও চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিতে হতাশ। যদিও তারা সরকারি দল ঘনিষ্ঠ হওয়ায় নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে নারাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রকল্প ও অর্থ বরাদ্দের কমতি রাখছেন না।

কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও কেন এক ফোঁটা সুফল মিলছে না তা তদন্ত করে দেখা উচিত। প্রয়োজনে স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করা উচিত।’

উল্লেখ্য, বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যান একে অপরকে দোষারোপ করেছেন। এর মধ্যে সিডিএ চেয়ারম্যানের পদে থাকা এম জহিরুল আলম দোভাষ নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী যুগ্ম সম্পাদক। দুজনই স্বজ্জন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত হলেও তাদের এই দোষারোপের সংস্কৃতি দলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর