বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভিন্ন কৌশলে মেডিকেল কোচিং!

খুলনায় টার্গেটে ৫ হাজার শিক্ষার্থী, ভর্তি পরীক্ষায় দুর্নীতি ঠেকাতে তদারকির দাবি

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় খুলনার পাঁচ চিকিৎসক গ্রেফতারের পর চক্রের অন্য সদস্যরা গাঢাকা দিয়েছেন। তবে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে ভর্তি কার্যক্রম চালু রেখেছে হাফ ডজনের বেশি মেডিকেল কোচিং সেন্টার। ‘৯৫ নম্বর প্রশ্ন কমন’, ‘ম্যারাথন লাইভ ক্লাস’, ‘খুলনা মেডিকেলের ডাক্তারদের দ্বারা বাসায় স্পেশাল কেয়ার’, ‘১৫ জনের মাস্টার ব্যাচ’, ‘এক্সাম ব্যাচ’সহ চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কোচিং ব্যবসায়ীরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশাসনের কোনো তদারকি না থাকায় খুলনা শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার। শিক্ষার্থী অভিভাবকদের তীব্র আগ্রহকে পুঁজি করে কোচিং বাণিজ্য মাথাচাড়া দিয়েছে। জানা যায়, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ঢাকা-খুলনা থেকে থ্রি ডক্টরস ও মেডিকোর দুই চিকিৎসক গ্রেফতারের পর প্রতিষ্ঠান দুটির খুলনা শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা এখন ভর্তি হচ্ছেন ডিএমসি স্কলার, উদ্ভাস ও রেটিনা কোচিংয়ে। যার মধ্যে ডিএমসি স্কলারের উপদেষ্টা ডা. হাদিউর রহমান সিয়াম খুলনা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ছিলেন। এখানে মেডিকেল ভর্তি কোর্স ফি ২২ হাজার টাকা। অভিভাবকরা জানান, এখানে ভর্তির পর ডা. সিয়ামের ‘মাস্টার ব্যাচে’র জন্য আলাদাভাবে ভর্তিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। যার প্রতি মাসের কোর্স ফি ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া ডা. মঈনুল, ডা. সিয়ামের ব্যাচ ও খুলনা মেডিকেলের ডাক্তারদের দ্বারা বাসায় স্পেশাল কেয়ার ক্লাস করানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়। উম্মেস কোচিংসহ আরও কয়েকটি কোচিং কোর্স ফির ডিসকাউন্ট দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রলোভন দিচ্ছে।

বিভিন্ন সময় পরিচালকদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও খুলনায় রেটিনা মেডিকেল কোচিংও তাদের ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, প্রতি বছর খুলনায় প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী টার্গেট করে কোচিং ব্যবসায়ীরা ফাঁদ পাতেন। আগামী ১০-১২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরুর পর কোচিং চলবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আগপর্যন্ত। তিন-চার মাসেই কোচিংগুলোর আয় প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা।

এদিকে মেডিকেল কোচিং বাণিজ্য ও প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় রাষ্ট্রের তদারকির অভাবকেই দায়ী করলেন বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. বাহারুল আলম। তিনি বলেন, এখন যে কেউ ইচ্ছা করলেই কোনো ভবনে যে কোনো রোডে একটা মেডিকেল কোচিং খুলে ফেলতে পারেন। এর মধ্যে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মেডিকেলে ভর্তিতে দুর্নীতি বন্ধে এগুলোকে প্রশাসনিক তদারকির আওতায় আনতে হবে।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে অবশ্যই শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সে শুধু একা শাস্তি কেন, তাকে প্রলুব্ধ করেছে যারা প্রশ্নফাঁস করার জন্য, তাদেরকেও শাস্তির আওতায় নিতে হবে।

জানা যায়, সম্প্রতি মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে খুলনার পাঁচ চিকিৎসক গ্রেফতারের পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এ ছাড়া ঢাকা, টাঙ্গাইল কিশোরগঞ্জ ও বরিশাল থেকে সাতজন চিকিৎসকসহ আরও ১২ জনকে গ্রেফতার করে সাইবার টিম। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনাটি জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন অভিভাবকরাও।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর