বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

উত্তরাঞ্চলে বন্যার পদধ্বনি

যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপরে, তিস্তার ভাঙনে আতঙ্ক

প্রতিদিন ডেস্ক

উত্তরাঞ্চলে বন্যার পদধ্বনি

দেশের উত্তরাঞ্চলে আবারও চোখ রাঙ্গাচ্ছে বন্যা। এর মধ্যে যমুনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে তিস্তার ভাঙনে আতঙ্কে রয়েছেন পাড়ের মানুষ। বসতভিটা ভাঙনরোধে যমুনায় বাঁধ নির্মাণের দাবিতে টাঙ্গাইলে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।

বগুড়া : জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার তিন সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কাজলা, কর্ণিবাড়ী, বোহাইল ইউনিয়নের সম্পূর্ণ এবং হাটশেরপুর, সদর, কুতুবপুর, চন্দনবাইশা, কামালপুর ইউনিয়নের ১২২টি চরের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠেছে। কিছু নিচু এলাকায় পানি উঠেছে। বুধবার বিকাল ৩টায় সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপাড়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৬.২৮ মিটার। এতে করে পানি বেড়ে ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আর বাঙালি নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৪.৩৬ মিটার। নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

জামালপুর : টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরামসহ শাখা নদীগুলোর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধার নদীর পানি কমতে শুরু করলেও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে বিরাজ করছে বন্যার শঙ্কা। বিকাল ৩টায় ফুলছড়ি পয়েন্টে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানির উচ্চতা বেড়ে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে অন্যান্য নদনদীর পানি কমলেও ফুঁসে উঠেছে ব্রহ্মপুত্র। সাঘাটা ও ফুলছড়ি দুটি উপজেলার যমুনা, ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা। এর মধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার এড়েন্ডাবাড়ি, উড়িয়া ও ফজলুপুর  ইউনিয়ন, সাঘাটায় মুন্সিরহাট এলাকার মানুষ বন্যার আশঙ্কা করছেন।

লালমনিরহাট : পানি কমার সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে তিস্তার। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, জেলার ১৭টি পয়েন্টে ভাঙছে তিস্তা। লালমনিরহাটের তিস্তার পানি বেড়ে সৃষ্ট চতুর্থ দফা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই আবারও শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। সদর উপজেলার বাগডোরা, খুনিয়াগাছ, রাজপুর, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচাসহ তিস্তার তীরবর্তী এলাকার কমপক্ষে ১৭ পয়েন্টে শুরু হওয়া এই ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, বসতভিটা। হুমকিতে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। ভাঙন কবলিতদের অভিযোগ, ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতি বছরই নদীভাঙনের শিকার হতে হচ্ছে তাদের। বন্যার ভোগান্তি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও নদীভাঙনের কবলে পড়ায় চরম হতাশা ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা।

কুড়িগ্রাম : জেলার সব কটি নদনদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনো তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল বিকাল ৩টায় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৮ সে.মি কমে বিপৎসীমার ৭ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৪ সে.মি নিচ দিয়ে ও ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ১৪ সে.মি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে চিলমারী পয়েন্টে ১৫ সে.মি ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৪ সে.মি নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর পানি ক্রমেই আরও বাড়ছে যা খুব দ্রুত বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর ভাটিতে বিশেষ করে চরাঞ্চলের অনেকের বাড়িঘরে পানি থাকায় কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

টাঙ্গাইল : জেলার ভূঞাপুরে বসতভিটা রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগীরা। গতকাল দুুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা ও গোবিন্দাসি ইউনিয়নের পাটিতাপাড়া গ্রামের বসতভিটা হারানো ভুক্তভোগীরা এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর