বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস এমপি আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নাটোর প্রতিনিধি

অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস এমপি আর নেই

উত্তরবঙ্গের কিংবদন্তি খ্যাত রাজনৈতিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস এমপি (৭৭) আর নেই। গতকাল সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্যগুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ রাজনীতিবিদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ বিশিষ্টজনেরা। এদিকে নাটোর-৪ আসন থেকে পাঁচবার নির্বাচিত এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুসের মৃত্যুতে বৃহত্তর রাজশাহী এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গতকাল রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ন্যাম ভবন মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আজ নির্বাচনী এলাকা বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর এবং নিজ গ্রাম বিলসায় তিন দফায় জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হবে।

গতকাল জানাজার নামাজের আগে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর এ আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। জানাজা শেষে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান। নামাজে জানাজায় অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, আতিউর রহমান আতিক, আবদুল আজিজ এমপি, আয়েন উদ্দিন এমপি, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রজমান, গুরুদাসপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। আবদুল কুদ্দুসকে দেখতে ন্যাম ভবনে ছুটে যান প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ অন্য নেতারা। গতকাল দুপুরে ঢাকায় জানাজা শেষে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় নির্বাচনী এলাকা গুরুদাসপুরে। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস এমপি ৩১ অক্টোবর ১৯৪৬ সালে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর ইউনিয়নের চলনবিলের বিলসা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৭/৮ বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। তিনি রাজশাহী কলেজ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন এবং ইংরেজিতে এম এ পাস করেন। রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফার ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। ১৯৬৮-৭২ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন। অধ্যাপক আবদুুল কুদ্দুস রাজশাহী অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদান ও সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে রাজাকারেরা আবদুল কুদ্দুসের শিশুপুত্র কল্লোলকে তুলে নিয়ে যায়, শর্ত দেয় কুদ্দুস রাজাকারদের হাতে ধরা দিলে শিশুপুত্র কল্লোলকে ছাড়বে। ধরা না দেওয়ায় এবং মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় শিশুপুত্র কল্লোলকে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি (১৯৭২-৭৪) রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তৎকালীন শাসক গোষ্ঠী রাজশাহী জেলায় যে ব্যক্তিকে প্রথম গ্রেফতার করা হয় তিনি হলেন আবদুল কুদ্দুস। দীর্ঘ পাঁচ বছর তিনি কারাভোগ করেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮২-৮৬ পর্যন্ত রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। রাজশাহী মহানগর গঠিত হলে ১৯৮৬-১৯৯০ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সামরিক শাসকের অবসানের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রথমবার সংসদ সদস্য হন। তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি নির্বাচনী এলাকা-৬১, নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর) আসনে সর্বমোট সাতবার দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত হয়ে অংশ নিয়ে পাঁচবার (১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৮) এমপি নির্বাচিত হন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বড়াইগ্রাম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, দুপুর ১২টায় গুরুদাসপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় এবং বাদ জোহর নিজ গ্রাম বিলসায় নামাজে জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।

এদিকে বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর এ আলম চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম প্রমুখ। এ ছাড়াও শোক জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগর প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি রত্না আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম হোসেন আলী হাসান, সাধারণ সম্পাদক সামাদ তালুকদারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর