শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কোটি টাকার ঋণ থেকে মুক্তি পাচ্ছে সেই ৩৩ পরিবার

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

কোটি টাকার ঋণ থেকে মুক্তি পাচ্ছে সেই ৩৩ পরিবার

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের বাড়বকুন্ড জনতা ব্যাংক ৩৩ জনকে একজন জামিনদারের জিম্মায় ঋণ দিয়েছে ১ কোটিরও বেশি টাকা। যাদের নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে তারা কেউ জানেন না ঋণ নেওয়ার বিষয়টি। দুই বছর পর ওই ঋণগ্রহীতাদের ঋণখেলাপি দেখিয়ে নোটিস জারি করার পর প্রকাশ্যে এসেছে বিষয়টি। অবশেষে সেই ঋণ থেকে মুক্ত হচ্ছে বাড়বকুন্ড ইউনিয়নের মান্দারিটোলা গ্রামের ৩৩টি দরিদ্র পরিবার। জনতা ব্যাংকের বাড়বকুন্ড শাখার ব্যবস্থাপক মিটন ঘোষ বলেন, বিষয়টি আমাদের কোনো ঋণগ্রহীতা অভিযোগ করেননি। যার কারণে আমরা কোনো কিছু জানতাম না। ইতোমধ্যে জামিনদার আহমেদুর রহমান ৫০ শতাংশের মতো টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি টাকাও তিনি পরিশোধ করবেন বলে জানিয়েছেন। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আমরা কিছু বলতে পারব না। জানা গেছে, করোনার প্রণোদনার কথা বলে এসব পরিবারের নামে জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ওই গ্রামের বাসিন্দা আহমেদুর রহমান। গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে ব্যাংকের স্থানীয় শাখার ব্যবস্থাপকের কক্ষে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে অভিযোগ স্বীকার করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধের লিখিত অঙ্গীকারনামা দেন আহমেদুর রহমান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জনতা ব্যাংকের বাড়বকুন্ড শাখার ব্যবস্থাপক মিটন ঘোষ, একই শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক বর্তমানে চট্টগ্রামের লালদীঘি শাখার ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজুর রহমান, অভিযুক্ত আহমেদুর রহমান, স্থানীয় চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজ ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। এই সিদ্ধান্তে মান্দারিটোলা গ্রামের ভুক্তভোগীদের পরিবারে স্বস্তি নেমে এসেছে। ভুক্তভোগী নাসরিন আক্তার ও তাঁর স্বামী ইমাম হোসেন বলেন, সংবাদমাধ্যমে তাঁদের এই দুরবস্থার কথা প্রচার না হলে খেয়ে না-খেয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হতো। এখন দুশ্চিন্তা কাটল। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার বাড়বকুন্ড ইউনিয়নের মান্দারিটোলা গ্রামের মৃত আবু তাহেরের ছেলে আহমেদুর রহমানের সম্পত্তি বলতে রয়েছে একতলা একটি পাকা বাড়ি এবং পৈতৃক কয়েকটি আধাপাকা দোকান। পাশাপাশি ব্যাংকে রয়েছে নগদ ৪২ লাখ টাকার ব্যাংক এফডিআর। বড় ধরনের তেমন কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা জমিজমা না থাকলেও তিনি একাই হয়েছেন জনতা ব্যাংক বাড়বকুন্ড শাখার ৩৩ জন ঋণগ্রহীতার কোটি টাকার জামিনদার। যেন ব্যাংক ঋণ নিয়ে দেওয়া তার দায়িত্ব বা পেশা! তবে ঋণগ্রহীতাদের দাবি, এসব ঋণের টাকা তারা চোখেও দেখেননি। প্রতি জনকে ১ হাজার টাকা করে মাত্র ৩৩ হাজার টাকার বিনিময়ে ৩৩ জনকে বোকা বানিয়ে অন্তত ১ কোটি টাকা ঋণ হাতিয়ে নিয়েছেন আহমেদুর রহমান।

দুই বছর আগে জনতা ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ কারবার ঘটেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের। ৩৩ জনের নামে ঋণ নিলেও কোনো কোনো পরিবারের ৫-৬ জন সদস্যের নামেও ঋণ নিয়েছেন আহমেদুর রহমান। এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর স্থানীয়দের মনে প্রশ্ন এসেছে, কীসের ভিত্তিতে একজন সাধারণ ব্যক্তি আহমেদুর রহমানকে ৩৩ জন ব্যক্তির ঋণের জামিনদার করলেন জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তারা?

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ২০২১ সালের শুরুতে করোনাকালে সরকার গরিব-দুঃখীদের আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে বলে কৌশলে নিজ গ্রামের প্রতিবেশীদের জনতা ব্যাংক বাড়বকুন্ড শাখায় নিয়ে যান আহমেদুর রহমান। সে সময় তাদের বলা হয়েছিল, একটি করে সঞ্চয়ী হিসাব খুললেই পাওয়া যাবে নগদ ১ হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবে করোনাকালে অভাব-অনটন কাজ হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন অনেকে। এর মধ্যে পড়াশোনা না জানা কিংবা স্বশিক্ষিত মানুষজনকে টার্গেট করেন আহমেদুর রহমান। সে সময় তারা বুঝতেই পারেননি যে জনতা ব্যাংক তাদের কাছ থেকে ঋণের সব কার্যক্রমের ফাইল ও খালি চেকে স্বাক্ষর নিয়ে ফেলা হয়েছে, শুধু ১ হাজার টাকার প্রণোদনার কথা বলে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর