শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নীরবে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপের রোগী

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

নীরবে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপের রোগী

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের মোট রোগীর মধ্যে ২০ শতাংশই উচ্চ রক্তচাপের। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (সিআইএমসিএইচ) মেডিসিনের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ রোগীই উচ্চ রক্তচাপের। প্রতিনিয়ই উচ্চ রক্তচাপের রোগী বাড়ছে।

চট্টগ্রামে নীরবেই বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপের রোগী। ডায়াবেটিস রোগীর চেয়ে উচ্চ রক্তচাপের রোগী কোনো মতেই কম নয়। অথচ এ নিয়ে রোগী কিংবা রোগীর স্বজনের মধ্যে কোনো সতর্ক-সচেতনতা দেখা যায় না। বরং নীরবেই ঘাতক ব্যাধিটি মানুষের শরীরে বাসা বেঁধে চলেছে। তদুপরি, বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবসে ‘সঠিকভাবে ব্লাড প্রেশার মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন ও দীর্ঘ জীবন গঠন করুন’ শীর্ষক সচেতনতামূলক প্রতিপাদ্য রাখা হলেও এর কোনো প্রভাব দেখা যায় না।  

বাংলাদেশ হাইপারটেনশন ও হার্ট ফেইলিউর ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাস বলেন, অপরিমিত খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশগত কারণ, ধূমপান-মদপান, ফাস্টফুডসহ নানা কারণে উচ্চ রক্তচাপের রোগী বাড়ছে। তাছাড়া, পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেলেও উচ্চ রক্তচাপের রোগী বাড়ে। তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ নিজেই হাইপারটেনশন সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গহানি ঘটায়। মানুষ ডায়াবেটিসকে যেভাবে ভয় পায় হাইপারটেনশনকে সেভাবে ভয় পায় না। অথচ বর্তমানে হাইপারটেনশন ডায়াবেটিসের চেয়েও কমন একটি রোগ। 

চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, হাসপাতালে আসা রোগীর মধ্যে ২০ শতাংশই উচ্চ রক্তচাপের।  এর মধ্যে কেউ রোগটি নিয়েই আসে, কেউ রোগ নির্ণয়ের পর শনাক্ত হয়। কিন্তু এটা নিয়ে রোগীদের মধ্যে কোনো সচেতনতা দেখা যায় না। অথচ এটির কারণেই স্ট্রোক, কিডনি, চোখ ও মস্তিষ্কের সমস্যা তৈরি হতে পারে। বলা যায়, এটি শরীরের মাল্টিপল অর্গানে অ্যাটাক করে। এটি মৃত্যুর অন্যতম কারণ। তাই এ রোগ নিয়ে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। সিআইএমসিএইচএর মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেহেরুন্নিছা খানম বলেন, নিয়মিত প্রেশার মাপাটা অতি জরুরি। এটির গুরুত্ব দিয়েই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত তিন বছর ধরেই সঠিকভাবে ব্লাড প্রেশার মাপার বিষয়টিকে প্রতিপাদ্য হিসাবে রাখছে। তাই প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সব বয়সী মানুষদের নিয়মিত প্রেশার মাপা উচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন ডিজিটাল প্রেশার মেশিনগুলোর মাপকে অনুমোদন দিয়েছে। তাই যে কেউ বাসায় বসেই নিয়মিত প্রেশার চেক করতে পারেন।

জানা যায়, সরকার নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের মাধ্যমে জেলা হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডায়াবেটিস ও প্রেশারের চিকিৎসা-ওষুধ বিনামূল্যে দিচ্ছে। নিয়মিত মনিটরিং ও ধারাবাহিকতা রক্ষায় রোগীদের দেওয়া হয় একটি বই। তবে ডায়াবেটিস রোগীর মতো উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মধ্যে রোগটি নিয়ে সচেতনতা অনেক কম।  চিকিৎসকরা মনে করছেন, সাধারণ মানুষ হৃদরোগ, ক্যান্সার, চক্ষু, নাক-কান-গলা, সার্জিক্যাল সমস্যা, কিডনি, চর্ম, ডায়াবেটিস, মনোরোগ, অর্থোপেডিক সমস্যাগুলোকে যেভাবে গুরুত্ব দেয়, সেভাবে উচ্চ রক্তচাপের বিষয়টি গুরুত্ব পায় না। এ কারণে নীরবেই এটি মানুষকে ঘায়েল করে বসে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর