শিরোনাম
শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাঁচানো গেল না প্লেনে অসুস্থ হওয়া সিলেটের সেই শিশুকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার সময় প্লেনে অসুস্থ হয়ে পড়া সিলেটের শিশু রুবাবা তানজিলা মারা গেছে। চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বৃহস্পতিবার ভোররাত সোয়া ৩টার দিকে ভারতের নাগপুরের বেসরকারি হাসপাতাল কিংসওয়েতে ১৫ মাস বয়সী ওই শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আজ শনিবার তার লাশ দেশে আসার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রুবাবার আত্মীয় সেলিম আল রাজি। এর আগে গত ২৭ আগস্ট রাতে ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লি হয়ে বাংলাদেশে আসার পথে প্লেনেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয় রুবাবা। এমতাবস্থায় ভিস্তারা এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি দিল্লি না এসে রুট পরিবর্তন করে নাগপুরে অবতরণ করে। পরে তাকে কেআইএমএস-কিংসওয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রুবাবা নগরীর ঘাসিটুলার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন ও নাসরিন আক্তার শিমুর মেয়ে। আনোয়ার হোসেন সিলেট নগরীর মধুশহীদস্থ ট্রাস্ট মেডিকেলের জেনারেল ম্যানেজার ও নাসরিন আক্তার শিমু সিলেটের মুহিবুর রহমান একাডেমির শিক্ষিকা। জানা গেছে, শিশু রুবাবা জন্মগতভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত ছিল। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বেঙ্গালুরের নারায়ণা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার বাইপাস হার্ট সার্জারি হয়।

চিকিৎসা শেষে গত ২৭ আগস্ট বাবা-মায়ের সঙ্গে ভিস্তারা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লি হয়ে বাংলাদেশে ফিরছিল রুবাবা। বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লির উদ্দেশে ফ্লাইটটি ছাড়ার পর রুবাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। মা-বাবার কোলে সে অচেতন হয়ে পড়লে বিমান ক্রুরা উড়োজাহাজে কোনো চিকিৎসক আছেন কি না জানতে চান। একই ফ্লাইটে বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লি ফিরছিলেন ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস-এইমস’ এর পাঁচ চিকিৎসক। তাঁরা কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) ব্যবস্থার মাধ্যমে শিশুটিকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেন। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে শিশু রুবাবা।

এরপর ফ্লাইটটি দিল্লিতে না গিয়ে রুট পরিবর্তন করে নিকটবর্তী নাগপুরে অবতরণ করে। সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় কেআইএমএস-কিংসওয়ে হাসপাতালে।

এইমস কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শিশুটির পার্লস পাওয়া যাচ্ছিল না, তার হাত-পা ঠান্ডা ছিল এবং শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ ছিল। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে থাকা ডাক্তাররা সিপিআর চালু করেন। তারা তাদের দক্ষতা দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। পরে ডাক্তারদের পরামর্শে ভিস্তারার ফ্লাইটটি নাগপুর এয়ারপোর্টে ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং করা হয়। সেখান থেকে শিশু রুবাবাকে অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে হস্তান্তর করেন তারা।’

কিংসওয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার এজাজ শামি (ব্র্যান্ডিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন) জানান, ‘তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে শিশুটি মারা যায়।’

তিনি আরও জানান, ‘প্লেনের ভেতর এবং হাসপাতালে নিয়ে আসার পর থেকে তাকে অচেতন অবস্থা থেকে পুনরুজ্জীবিত করার একাধিকবার প্রচেষ্টা চালানো হলেও তা ব্যর্থ হয়। চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে হাসপাতালের সবাই মিলে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েও তাকে বাঁচানো যায়নি। শিশুটি কিডনি এবং কার্ডিয়াক ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিল। একটা সময় তার বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর