রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অভিভাবকহীন খুলনা!

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

অভিভাবকহীন খুলনা!

খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে গত ৩ জুলাই শপথ নিয়েছেন তালুকদার আবদুল খালেক, তবে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পাননি। এর আগে ১১ মে পদত্যাগ করে তিনি সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হন। ফলে সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছে খুলনা নগর। নগরবাসী বলছেন, সিটি করপোরেশনের শীর্ষ এই পদটি ফাঁকা থাকায় শহরে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনে এবার ৩১টি ওয়ার্ডে অর্ধেকেরও বেশি বর্তমান কাউন্সিলর পদ হারিয়েছেন। ১৬ জন কাউন্সিলরের বিদায় আর নতুনদের দায়িত্ব গ্রহণের মাঝখানের সময়ে অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। বিশেষত, যেসব কাউন্সিলর সর্বশেষ নির্বাচনে প্রার্থী হননি বা পরাজিত হয়েছেন, তাদের এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে না। নগরভবনের কর্মকর্তারাও রুটিন কার্যক্রমের বাইরে তেমন কিছু করছেন না।

জানা যায়, গত ১ সেপ্টেম্বর এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। পানি নিষ্কাশনে ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার না করা, পুকুর-খাল-নদী বেদখল বা ভরাটসহ বিভিন্ন কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন রাস্তা মোড়, বাস্তুহারা, বয়রা বাজার, মুজগুন্নি আবাসিক, গল্লামারীর নিচু এলাকা, রয়েল মোড়, শান্তিধাম, বাইতিপাড়া, চাঁনমারী, লবণচরা মিস্ত্রিপাড়া, হরিণটানাসহ নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ পানিতে ডুবে যায়। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের কোনো তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।

নাগরিক নেতা শেখ আশরাফ-উজ্জামান বলেন, অন্যান্য বছর জলাবদ্ধতা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে মেয়রের নেতৃত্বে করপোরেশনের কর্মীদের জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন এবং পানি দ্রুত নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। কিন্তু এবার পানি নিষ্কাশনে সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ ছিল না। পুরো নগর যেন অভিভাবকহীন অবস্থায় আছে। এদিকে মনিটরিংয়ের অভাবে ভেঙে পড়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। রাতের বেলায় ওয়ার্ড পর্যায়ে ‘এসটিএস’ (প্রাথমিকভাবে ময়লা জড়ো করার স্থান) থেকে ট্রাক দিয়ে বর্জ্য অপসারণের কথা থাকলেও কেডিএ এভিনিউসহ বিভিন্ন স্থানে দিনের বেলায়ও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। দুর্গন্ধে আশপাশ দিয়ে চলাচলের উপায় থাকে না। প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে মুজগুন্নি মহাসড়কটি পুনর্নির্মাণের পর পরই বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়। তড়িঘড়ি করে এসব গর্তে ইটের খোয়া, বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। কেডিএ এভিনিউ টাইগার গার্ডেন থেকে আলিশান মোড় পর্যন্ত সড়কের এক পাশে গর্ত তৈরি হয়েছে। সেখানে বৃষ্টির পানি জমে চলাচলে ভোগান্তি বাড়ছে। ময়লাপোতা-নিরালা সড়কটি চার লেনে উন্নীত হলেও কেসিসি সান্ধ্য বাজারের সামনে সড়কের একাংশ হকারদের দখলে চলে গেছে। ফুটপাত দিয়ে হাঁটার কোনো উপায় নেই। এসব দেখারও কেউ নেই। জানা যায়, যানজট নিরসনে ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিয়েছিলেন মেয়র তালুকদার খালেক। সড়কের মোড়ে করপোরেশনের কর্মীরা নজরদারি করতেন। ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণে সেই তৎপরতাও দেখা যায় না। ফলে সড়কে যানজট আরও বেড়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সিটি করপোরেশনে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। সবাই এখন দায়সারা অবস্থায় আছে। এ বিষয়ে সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘শপথ নিলেও আমি দায়িত্ব গ্রহণ করিনি, তবুও নগরবাসীর সমস্যা-দুর্ভোগের কথা শুনছি। প্রতিদিনই নগরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষজনের সঙ্গে কথা বলছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব সমস্যা সমাধানে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর