শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী

সবাই সমান অধিকার নিয়ে বাস করবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সবাই সমান অধিকার নিয়ে বাস করবেন

সনাতন সম্প্রদায়ের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনারা কেন নিজেদের সংখ্যালঘু বলবেন। এখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে কোনো কথা নেই। সকল নাগরিক সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে। গতকাল দুপুরে গণভবনে শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবনের খোলা মাঠে প্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রী এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে একসঙ্গে কাজ করতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে এগিয়ে নিতে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব। আমরা আমাদের জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা ও ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব। এ সময় তিনি দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের যে কোনো পদক্ষেপ এবং জাতির অগ্রগতির বিরুদ্ধে অপপ্রচার সম্পর্কে সবাইকে সর্বদা সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং স্মার্ট সরকার, স্মার্ট দক্ষ জনশক্তি, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সোসাইটি নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে আরও এগিয়ে যাবে। কারণ তাঁর সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইতোমধ্যেই এ দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেছে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংবিধান সংশোধন করে সব জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষ জনগণের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও অধিকার পুনরুদ্ধার করেছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান সংবিধান সংশোধন করে সব ধর্মের অধিকার রক্ষা ও ধর্মীয় উৎসব পালনের স্বাধীনতা সংক্রান্ত সব অনুচ্ছেদ বাতিল করেছিলেন। তিনি বলেন, জিয়া সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বাতিল করে দেন, যা আমাদেন ধর্মীয় নিরপেক্ষতাকে নিশ্চিত করেছিল। শেখ হাসিনা বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে- প্রতিটি ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব স্বাধীনভাবে পালন করবে। প্রধানমন্ত্রী হিন্দু সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, দেশটি সবার, কারণ জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। ধর্ম যার যার উৎসব সবার এই স্লোগান আওয়ামী লীগের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জন্মাষ্টমী উৎসব করার জন্য আপনাদের এখানে দাওয়াত দিয়েছি। আপনারা সেই দাওয়াত কবুল করেছেন, এসেছেন। আমি আগেই বলেছি, আমার গণভবনের মাটি ধন্য হয়েছে। কারণ, আমরা সব ধর্মের মানুষ উৎসবের সঙ্গে শামিল হতে চাই এবং একসঙ্গে তা পালন করি। আমরা সেই চেতনা নিয়েই বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশ সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। স্বৈরশাসক থেকে শুরু করে বিএনপির শাসনামলে বারবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ঢাকেশ্বরী মন্দির ভেঙে দিয়েছিলে, পুড়িয়ে দিয়েছিল। আমি সরকারে আসার পর সেই মন্দির নিজে তৈরি করে দিয়েছি।  সেখানকার জমি-পুকুর সংস্কার করে দিয়েছি। হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছি। সেখানে সিড মানিও দিয়েছি এবং ট্রাস্টে প্রতিবছর টাকা দিই।

 যার মাধ্যমে সমস্ত জায়গায় বিভিন্ন মন্দির সংস্কারের জন্য কাজ করা হয়। প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে তিনটি করে মন্দির সংস্কারের জন্য ১০ লাখ করে টাকা দেওয়া হচ্ছে। পৌরসভায় তিনটি করে মন্দিরের জন্য ১৫ লাখ করে টাকা দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও বড় উপজেলা হলে সেখানে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মন্দির সংস্কার করা হচ্ছে। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী পুরনো মন্দিরগুলো দর্শনীয় করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমাদের সবসময় একটাই লক্ষ্য, দেশের মানুষ সমানভাবে কাজ করবে, থাকবে। সকলে অধিকার নিয়ে থাকবে। আমি একটা কথা সবসময় আপনাদের বলব, যারা এই মাটিতে জন্ম নিয়েছেন, তারা এই মাটিরই সন্তান। এই মাটিরই নাগরিক হিসেবে আপনাদের অধিকার। আর সেভাবেই আপনারা বসবাস করবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যখন পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছেন, তখন তো কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে খ্রিস্টান সেই বিভেদ ছিল না। ওই ঘাতকের বুলেটে সব রক্ত মিশে একাকার হয়ে গেছে। সব রক্তের রং কিন্তু লাল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে ফের ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। কাজেই আমি এটা চাই, সবাই যার যার ধর্ম যথাযথভাবে পালন করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাকরির ক্ষেত্রে অনেক বৈষম্য ছিল, এখন আর নেই। আমরা কে দক্ষ সেটাই দেখি। প্রমোশন দক্ষতা দেখেই দিই। কে কাজ করে সেটা দেখেই করি। কার কার যোগ্যতা আছে তা দেখেই মূল্যায়ন করি। এখানে কোনো কিছু ধর্মীয়ভাবে চিন্তা করা হয় না। কোথাও যদি কোনো ধর্মের লোক কম থাকে খুঁজে বের করে সেখানে নিয়ে আসি। যাতে বৈষম্য না হয়।

অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল করে আপনারা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে করে দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, আমাদের ইসলাম ধর্মে হেবা আইন আছে। সেখানে আমাকে নির্দিষ্ট আকারে টাকা দিতে হয়। কিন্তু আপনাদের হিন্দু ধর্মে সেটা ছিল না। আমরা সেই হেবা আইন হিন্দু ধর্মের জন্যও করে দিয়েছি। কারণ, আপনার সম্পত্তি আপনি আপনার সন্তানকে দিয়ে যাবেন। আমরা (মুসলমান) যে অধিকারটা ভোগ করি হেবা আইনে। ঠিক সেই অধিকারটাও আমরা হিন্দু ধর্মসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষের জন্য করে দিয়েছি। যাতে আপনার সম্পত্তি অন্য কেউ নয়-ছয় করতে না পারে, সুরক্ষিত থাকে। তিনি বলেন, আপনারা দেখবেন, প্রতিটি ধর্মের ধর্মগুরু একই কথা বলেছেন। সবার ওপরে মানুষ সত্য। মানবধর্ম এখানে বড়। একেকজন নিজের মতো করে সেটা পালন করে। আসলে মূল কথা তো একই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নবী করিম হযরত মুহম্মদ (সা.) বিদায় হজে বলে গেছেন, সকল ধর্মের প্রতি সমান সম্মান দেখাতে হবে। কাজেই আমি এটা বলব, আপনারা কখনো নিজেদের ছোট করে দেখবেন না। আমরা সেভাবে দেখি না। আমাদের কাছে সবাই সমান। অন্তত আওয়ামী লীগ এটা বিশ্বাস করে। আর সেই চেতনা নিয়েই তো আমাদের স্বাধীনতা। তিনি আরও বলেন, স্বাধীন-সার্বভৌম এই বাংলাদেশ জাতির পিতা দিয়ে গেছেন। হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান যত ধর্মের লোকই থাকুক না কেন, সবাই সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে। সেটাই আমরা করে যাচ্ছি। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। যেমন আমরা আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাস করি, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। এটাও আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিখিয়ে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় চেষ্টা করি বাংলাদেশে যেন ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় থাকে। একটা সামাজিক সম্প্রীতি যেন আমরা ধারণ করে চলি। যেখানে কাউকে ছোট না করে সবাই সমান অধিকার নিয়ে চলতে চাই। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে যারা কেবল দেশের ভিতর নয়, বিদেশে গিয়েও বাংলাদেশের বদনাম করে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানও বক্তব্য রাখেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর