শিরোনাম
রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সরকারি ৪০ বিঘা জমি দখলে নিতে জালিয়াতি

অনলাইনে দেওয়া হয়েছে খাজনা, তদন্তে নেমেছে ভূমি অফিস

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীর বাগমারায় অন্তত ৪০ বিঘা সরকারি খাস জমির গোপনে খাজনা দিয়ে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে একটি চক্র। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), ইউএনও এমনকি জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অনুমতি না নিয়েই জমির ডিজিটাল জরিপের সময় (ডেটা এন্ট্রি) গোপনে হোল্ডিং খুলে খাজনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর উপজেলা প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় তহশিলদারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)। প্রাথমিক তদন্তে ওই জমির মালিকানা দাবি করা সাদ্দাম হোসেন নামের এক ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গেছে।

সাদ্দামের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর এলাকায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কহিতপাড়া মৌজার জেএল নম্বর-২০৪-এ ৮১১২২৩০২৮২২৩ নম্বর দাখিলায় ১ একর ৫০ শতাংশ, ঝিকরা মৌজার জেএল নম্বর-২২৭-তে ৮১১২২৩০২৮১৯৯ নম্বর দাখিলায় ১ একর ৪৯ শতাংশ, ঝাড়গ্রাম মৌজার জেএল নম্বর-২১৫-তে ৮১১২২৩০২৮২২৪ নম্বর দাখিলায় ৬ একর ৪০ শতাংশ, নামকান মৌজার জেএল নম্বর-২১৯-তে ৮১১২২৩০২১৪১৮ নম্বর দাখিলায় ৮৭ শতাংশ, খাপুর মৌজার জেএল নম্বর-১৭৮-তে ৮১১২২৩০২৮১৯৮ নম্বর দাখিলায় ৯০ শতাংশ ও কয়া মৌজার জেএল নম্বর-১৮৮-তে ৮১১২২৩০৩০৭৬৪ নম্বর দাখিলায় ৩ একর ৫০ শতাংশ জমি জালিয়াতির মাধ্যমে খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসূত্র আছে। সূত্রমতে, সরকারি খাস জমি স্থানীয় উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অনুমতি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বড় বিহানালি ইউনিয়নে প্রায় ৪০ বিঘা খাস জমি এ ধরনের কোনো অনুমতি বা বরাদ্দপত্র ছাড়াই গোপনে সাদ্দাম হোসেন নামের এক ব্যক্তি খাজনা পরিশোধ করেছেন। সম্প্রতি বিষয়টি ধরা পড়ার পরে নড়েচড়ে বসে উপজেলা ভূমি অফিস।

জানা যায়, সম্প্রতি ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপের সময় গোপনে বাগমারার ওই ৪০ বিঘা জমির খাজনা পরিশোধ করা হয় অনলাইনে। পরবর্তীতে ওই জমির মালিক হিসেবে সাদ্দাম হোসেন নামের এক ব্যক্তির নাম অনলাইনে এন্ট্রি করা হয়। তবে ওই জমির খাজনা পরিশোধ বা জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে অনুমতিপত্রের কোনো নথি বড়বিহানালি ইউনিয়ন পরিষদ ভূমি অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিসের রেজিস্ট্রারের নেই। এর পর স্থানীয় এক ব্যক্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। সূত্র জানায়, উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। কয়েক লাখ টাকার বাণিজ্যও হয়েছে কাজটি করতে গিয়ে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র জমিগুলো বেহাত করতে সম্প্রতি খাজনা পরিশোধ করে। গোপনে হোল্ডিংও খুলে নেয়। অনলাইনে হোল্ডিং খুলতে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদারের কাছে পাসওয়ার্ড থাকে। তার অনুমতি ছাড়া এটি সম্ভব নয়। আবার ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিস যে তথ্য দিয়েছে- সেটির সঙ্গেও মিল নেই। এতেই প্রমাণ হয়, দুটি অফিসই জড়িত। স্থানীয় জামিলুর রহমান নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, উপজেলা ও স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের একটি চক্রের সহযোগিতায় সরকারি ৪০ বিঘা জমি কোনো বরাদ্দপত্র ছাড়াই গোপনে খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে। ওই জমিটি বেহাত করতেই মূলত এ কাজটি করা হয়েছে। পরবর্তীতে মামলা করে জমির কাগজপত্র তৈরি করার চেষ্টা করবে ওই চক্রটি। এ কারণেই এত বড় জালিয়াতি করা হয়েছে।

বড় বিহানালি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটি আমার সময়ে হয়নি। এক বছর আগের তহশিলদারের আমলে এ জালিয়াতিটা হয়েছে। এর সঙ্গে পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকার সাদ্দাম হোসেন নামের এক ব্যক্তি জড়িত আছেন। তবে ভূমি অফিসের লোকজনও জড়িত থাকতে পারেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে যা উঠে আসবে, আমি সেটিই জানাব এসি ল্যান্ডকে। জমি জরিপের সময় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অনেককেই ডেকে এনে ওই কাজ দেওয়া হয়েছিল। যারা ডেটা এন্ট্রি করেছে, তারাও জড়িত থাকতে পারে।

বাগমারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন চৌধুরী বলেন, কয়েক বছর ডিজিটাল ভূমি জরিপের সময় ভুল করেও কাজটি হতে পারে। তবে অনলাইন খাজনা পরিশোধ করা হলেও তার কোনো নথি আমাদের কাছে নেই। এ কারণে অনলাইন থেকে ওই নামটি আমরা মুছে দিয়েছি। জমিগুলো কেউ এখনো দখল করতেও পারেনি। তারপরও আমরা সতর্ক আছি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর