শিরোনাম
রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কুষ্টিয়ায় দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলায় অগ্রগতি নেই

চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ শিল্পোদ্যোক্তারা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রথম দফায় ১০০ দশমিক ৫৬ একর জায়গায় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পরে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে বৃহৎ পরিসরে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও সেই প্রস্তাবনার বিষয়েও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে কুষ্টিয়ায় দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ। এদিকে কুষ্টিয়া বিসিক শিল্পনগরীতে প্রায় তিন দশক ধরে বরাদ্দযোগ্য কোনো জমি না থাকায় চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ এখানকার শিল্পোদ্যোক্তারা। বরাদ্দযোগ্য জমির অভাবে অনেক শিল্পোদ্যোক্তাই ইচ্ছা থাকা শর্তেও ছোট-বড় মিলিয়ে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারছেন না। সূত্রমতে, ১৯৬৩ সালে কুষ্টিয়া শহরের অদূরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক সংলগ্ন কুমারগাড়া এলাকায় ১৮ দশমিক ৪৯ একর জমির ওপর কুষ্টিয়া বিসিক শিল্পনগর স্থাপন করা হয়। সেখানে ৮৭টি প্লটের মধ্যে তিনটি বিসিকের প্রশাসনিক কাজে ব্যবহারের জন্য রেখে বাকি ৮৪টি প্লট উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ  দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে সেখানে ছোট-বড় একাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতা আর প্রতিকূলতার কারণে ব্যবসায় টিকে থাকতে না পেরে বিআরবি গ্রুপ ছাড়া অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্পনগরীতে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য বরাদ্দযোগ্য কোনো জায়গা না থাকায় সেখানে নতুন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। নব্বইয়ের দশক থেকে কুষ্টিয়া বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় প্লট বরাদ্দ  দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে বিগত কয়েক দশকের মধ্যেও বিসিক শিল্পনগরীর পরিধি বাড়ানো সম্ভব হয়নি। ফলে জায়গার অভাবে যেমন স্থাপন করা কলকারখানা সম্প্রসারণ হচ্ছে না, আবার নতুন নতুন কলকারখানাও গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে বিখ্যাত কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হলেও জমি অধিগ্রহণসহ আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতায় দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কুমারখালীর জিলাপীতলায় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য জায়গা নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরবর্তীতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশের  ডোবায় ১০০ দশমিক ৫৬ একর জায়গায় শিল্পনগরী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল জানান, তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা ছাড়াও নানা কারণে প্রসিদ্ধ কুমারখালী উপজেলায় প্রথম দিকে দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস  স্টেশনের পাশের ডোবায় ১০০ দশমিক ৫৬ একর জায়গা প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল। বিসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সর্বশেষ প্রায় বছর দেড়েক আগে বিসিকের এমডি জায়গা নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সরেজমিন কুমারখালীতে আসেন। প্রস্তাবিত ওই জায়গাসহ আরও কয়েকটি জায়গা তাকে দেখানো হয়। বিসিকের পক্ষ থেকে বৃহৎ পরিসরে শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য প্রায় ৫০০ একর জায়গার প্রয়োজনীয়তার কথা জানানো হয়। যে কারণে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশের ডোবায় ১০০ দশমিক ৫৬ একর জায়গায় দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার প্রস্তাবনাটি ভেস্তে যায়। আর ওই স্থানে ৫০০ একর জায়গাও নেই। মূলত বিসিকের নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী জায়গা নির্ধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়ায় কুমারখালীতে দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগের বিষয়টি ঝুলে রয়েছে।

কুষ্টিয়া বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আশানুজ্জামান জানান, কুষ্টিয়ায় অনেকেই শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যে অনেক শিল্পোদ্যোক্তা নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য তাদের কাছে জায়গা চেয়ে আবেদনও করেছেন। কিন্তু কুষ্টিয়া বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় কোনো জায়গা না থাকায় শিল্পোদ্যোক্তাদের জায়গা বরাদ্দ প্রদান করা সম্ভবপর হয়ে উঠছে না। 

অন্যদিকে বিসিকের কাছ থেকে নির্ধারিত জায়গা না পেয়ে অনেকেই অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র কলকারখানা গড়ে তুলছেন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে প্রায় ৫০০ একর জায়গার ওপরে মাল্টি সেক্টরিয়াল বিসিক শিল্পপার্ক গড়ে তোলার একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এ প্রস্তাবনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর