রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তুই তোকারি বলায় খুন

আলী আজম

তুই তোকারি বলায় খুন

পুরান ঢাকার লালবাগ ও নিউমার্কেট এলাকার ভাসমান হকার মো. হাফিজ ওরফে প্যাপা (১৩)। সে হকারির পাশাপাশি সমবয়সী স্থানীয় কিশোর মো. রেদোয়ান আহম্মেদ ইরফান ওরফে ফরেন ইরফানের সঙ্গে খেলাধুলা করত। খেলাধুলার একপর্যায়ে তারা তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ে। হাফিজ তাকে তুই তোকারি করে কথা বলছিল। এটা মেনে নিতে পারেনি ইরফান। মহল্লার ছেলে হওয়ায় নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে হাফিজকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য হত্যার পরিকল্পনা করে সে।

তর্কের মাত্র কয়েকদিনের মাথায় ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাতে হাফিজকে লালবাগের ডুরি আঙ্গুল লেনের ৪৬ নম্বর বাড়ির ছাদে নিয়ে যায় ইরফান। সেখানে ইরফানসহ চারজন মিলে হাত-পা বেঁধে উপর্যুপরি কুপিয়ে হাফিজকে হত্যা করে। পরে বস্তায় ভরে লাশ গুম করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু রাতেই স্থানীয়দের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের খবর জানতে পারে পুলিশ। এ ঘটনায় ৪ সেপ্টেম্বর লালবাগ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা মো. হারুন শেখ।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, মো. রেদোয়ান আহম্মেদ ইরফান স্থানীয় নবাবগঞ্জ বাজারের সামনে শহীদ আনোয়ার স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। মহল্লায় তার ১০-১২ জন বন্ধু আছে। ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরের পর নবাবগঞ্জ বড় মসজিদে বসে বন্ধু মো. আরিফ হোসেন ওরফে শাহাদাৎ হোসেন আরিফ, মো. ওয়াহিদ ওরফে সামির ও মো. রিফাত আহম্মেদকে নিয়ে হাফিজকে হত্যার পরিকল্পনা করে ইরফান। সে অনুযায়ী ঘটনার দিন বিকাল ৫টার দিকে তাদের তার বাসার সামনে আসতে বলে। ইরফান বলে, আমাদের যারা শত্রু আছে তাদের আমরা ভয় দেখামু ও মারমু। সন্ধ্যার দিকে তারা নবাবগঞ্জ বাজারে স্টার মাইকের সামনের একটি দোকান থেকে দুটি ছুরি কেনে। এরপর হাফিজের গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে। রাত ৮টার দিকে ইরফানের বাসার সামনে হাফিজ চিপস কিনতে আসে। তারা চারজন মিলে হাফিজকে ভুল বুঝিয়ে ৪৬ নম্বর ডুরি আঙ্গুল লেনের চার তলা বাসার ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে কাপড় শুকানোর রশি দিয়ে হাফিজের হাত-পা বেঁধে ফেলে।

ইরফান ছুরি দিয়ে হাফিজকে ভয় দেখাতে থাকে। এর পরও হাফিজ তার সঙ্গে তর্কে জড়ায়। তখন ইরফান ছুরি দিয়ে হাফিজের গলায় পোঁচ দেয়। পোঁচ জোরে লাগায় হাফিজ নিচে পড়ে যায়। আরিফ তখন হাফিজের গলায় ছুরি দিয়ে আরও দু-তিনটি টান দেয়। তখন তারা বলাবলি করে, হাফিজ বেঁচে থাকলে সমস্যা হবে। ফলে ইরফান ছুরি দিয়ে হাফিজের পেটে দু-তিনটি পোঁচ দেয়। এতে হাফিজ ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এরপর লাশ বস্তায় ভরে পাশের ৪৭/১ নম্বর ভবনের ছাদে নিয়ে লুকিয়ে রাখে। পরে ইরফানের বড় ভাই মো. তাজিম আহম্মেদ ইদমাম ছাদে ওঠে। ইরফান তাকে সব খুলে বলে। ঘটনা শুনে সে ঘাবড়ে যায়। পরে তার পরামর্শে ওই পাঁচজন ছাদ থেকে নেমে যে-যার মতো বাসায় চলে যায়।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার এসআই শেখ ফিরোজ আলম দীর্ঘ তদন্ত শেষে হাফিজ হত্যায় জড়িত ইরফান, আরিফ, ওয়াহিদ ও রিফাতকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেন। আদালত সেটি পর্যালোচনা করে স্ব-উদ্যোগে এ মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তরের পরিদর্শক এ কে এম নাসির উল্যাহ মামলাটি তদন্ত শুরু করেন। তিনিও দীর্ঘ তদন্ত শেষে আগের চারজনসহ ইদমাম নামে আরও একজনের জড়িত থাকার তথ্য পান। পরে চলতি বছরের ২৯ আগস্ট ইরফান, আরিফ, ওয়াহিদ, রিফাত ও ইদমামকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন। গতকাল এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এ কে এম নাসির উল্যাহ বলেন, মামলাটির তদন্তে নিহত হাফিজের সুরতহাল প্রতিবেদন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, জব্দ আলামত, ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট, সাক্ষ্য-প্রমাণে এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা পর্যালোচনা করে পাঁচজনের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।। তারা আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর