রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কুয়েত পাঠানোর নামে প্রতারণা চক্রের তিন সদস্য গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছদ্মনামে ফেসবুক পেজ খুলে কুয়েতের ভিসা ও বিএমইটি কার্ড জালিয়াত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়ারী বিভাগ। তারা হলেন- মো. শরিফুল ইসলাম, আবরার জাওয়ার তন্ময় ওরফে রেজাউল করিম রেজা ওরফে হৃদি মাহাজাবিন এবং আহিয়ান শিশির ওরফে কামরুজ্জামান শিশির। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪০টি পাসপোর্ট, ৯টি জাল ভিসা, জাল বিএমইটি কার্ডের ফটোকপিসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ও সিম উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি ও ঢাকার ভাটারা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা কুয়েতে লোক পাঠানোর জন্য গুলশান-১ এ আল সাফার ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি অফিস নেয়। এই ঠিকানা ব্যবহার করে ফেসবুকে বিভিন্ন ছদ্মনাম দিয়ে পেজ খোলে। সেখানে কুয়েতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তারা সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কেউ বিদেশ যেতে ইচ্ছুক হলে তার সঙ্গে তারা একটা চুক্তি করে। পরে প্রতারক চক্র আরবিতে লেখা বিভিন্ন ব্যক্তির কুয়েতের সঠিক ভিসা কপি সংগ্রহ করে। ভিসা নম্বর ঠিক রেখে ফটোশপের মাধ্যমে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তির নাম, পাসপোর্ট নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য সংযুক্ত করে কুয়েতের জাল ভিসা তৈরি করে। জাল ভিসা, পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা বিভিন্ন টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে তিন দিনের ট্রেনিং সম্পন্ন করে সার্টিফিকেট নেয়।

পরে জাল ভিসা, পাসপোর্ট এবং ট্রেনিংয়ের সার্টিফিকেট নিয়ে একজন বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তি জনশক্তি ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন জেলার কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে অবস্থিত ফিংগার প্রিন্ট অফিসে ফিংগার প্রিন্ট দিতে যায়। ওই অফিস কুয়েতের সরকারি ওয়েব সাইটে ভিসা নম্বর চেক করে আবেদন অনুমোদন থাকায় তারা বিদেশগমনেচ্ছুক ব্যক্তিদের ফিংগার প্রিন্ট নেয়। পরে স্ট্যাটাস অব বায়ো ফিঙ্গার এনরোলমেন্ট সাকসেস লেখা এককপি যাত্রীদের প্রদান করে। এ ছাড়া গ্রেফতারকৃতরা একটি সঠিক বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স কার্ডের স্ক্যানকপিতে বিদেশগামী ব্যক্তির নাম-ঠিকানা লিখে তা রঙিন কপি প্রিন্ট করে। সেটা দেখিয়ে বিএমইটি কার্ডও কমপ্লিট হয়েছে বলে জানায় বিদেশগামী যাত্রীদের। এরপর বিমানের টিকিট দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে চুক্তির পুরো টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে অফিসে তালা দিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়। ডিবিপ্রধান হারুন আরও বলেন, চক্রটি অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ অবস্থায় প্রতারণার শিকার একজন গত ৭ আগস্ট গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তে গ্রেফতার তিনজনকে শনাক্ত এবং গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার শরিফুলের নামে বিভিন্ন থানায় ৪টি ও আবরারের নামে একটি প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের মামলা আছে। আবরার ও শিশির উভয়ই ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি। প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা লিঙ্গ পরিবর্তন করে বিভিন্ন পরিচয় ধারণ করতো। ডিবির নিবিড় তদন্তে তাদের প্রকৃত পরিচয় উদ্ঘাটন করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর