সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিলেটে কাটা পড়ছে পাহাড়

অভিযানে আটক হয় শ্রমিক, জরিমানা দিয়ে ফের একই কাজে মালিকরা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

রাতের আঁধারে নয়, এখন সিলেটে টিলা কাটা চলে দিনদুপুরে। কেউ টিলা কেটে বিক্রি করছেন মাটি, আবার কেউ মাটির বিনিময়ে দিচ্ছেন টিলা কাটার অনুমতি। পরিবেশ অধিদফতর ও পুলিশের অভিযান হলে টিলা কাটার দায়ে আটক হন শ্রমিক। ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান টিলার মালিক ও মাটি কাটার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার। আর কোনো কোনো স্থানে টিলার মালিককে জরিমানা করা হলেও তাতে দমে থাকেন না তারা। জরিমানার টাকা দিয়ে ফের শুরু করেন টিলা কাটা। দেদার টিলাকাটার ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। এছাড়া প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। জনসচেতনতা ছাড়া শুধু আইনের প্রয়োগ দিয়ে টিলা কাটা বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে দাবি করছেন পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

পাহাড়-টিলা বেষ্টিত সিলেট জেলা। জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৭টিতে ছড়িয়ে রয়েছে সুউচ্চ টিলা। একসময় এই টিলাগুলো মাথা উঁচু করে নিজেদের বিশেষত্বের জানান দিত। কিন্তু অতিলোভী মালিক পক্ষ ও মাটিখেকোদের তান্ডবে দিন দিন এই টিলাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ টিলা কেটে আবাসন তৈরি করছেন, আবার কেউ নিচু এলাকায় গড়ে ওঠা আবাসন প্রকল্প ভরাটের জন্য বিক্রি করছেন মাটি। আর এতে একের পর এক টিলা অস্তিত্ব হারাচ্ছে।

জানা গেছে, জেলার মধ্যে সিলেট সদর, গোলাপগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় টিলার সংখ্যা বেশি। অনেক উপজেলায় টিলার মালিকরা মধ্যস্বত্বভোগী ঠিকাদারদের কাছে মাটি কাটার দায়িত্ব দিয়ে দেন। মাটিখেকো ওই ঠিকাদাররা তাদের নিজ দায়িত্বে টিলা কেটে মাটি নিয়ে যান। সেই মাটি বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পে বিক্রি করেন ঠিকাদাররা। টিলা কাটার জন্য প্রশাসন ‘ম্যানেজ’ও করেন তারা। আবার কোনো কোনো মালিক নিজ দায়িত্বে টিলা কেটে মাটি বিক্রি করে থাকেন। মাটি কাটার পর টিলার স্থানে গড়ে তোলা হয় আবাসন। এতে অনাবাদি পড়ে থাকা টিলার জায়গা হয়ে ওঠে দামি ভূমিতে। এ ছাড়া গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের বিভিন্ন স্থানে টিলা কেটে মাটির নিচ থেকে তোলা হয় পাথর। এ ক্ষেত্রে পাথরখেকোরা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে টিলা ইজারা নেন। টিলা কেটে তারা পাথর উত্তোলনের পর পুণরায় জায়গা মালিককে বুঝিয়ে দেন। এই লোভে পড়ে গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের অনেকে তাদের টিলা পাথরখেকোদের কাছে ইজারা দিয়েছেন। দিনরাত এসব টিলা কেটে চলছে পাথর উত্তোলন। গত ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের হরিপুর ৭ নম্বর গ্যাসকূপ সংলগ্ন এলাকায় টিলা কাটার সময় অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদফতর। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার পাশাপাশি অর্থদন্ড ও দেওয়া হয়। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন-জৈন্তাপুর উপজেলার শিকারখাঁ গ্রামের নজমুল আলম, শ্যামপুর গ্রামের হালিম উদ্দিন, হরিপুর ৭ নম্বর কূপ এলাকার আবদুল মতিন, উতলারপাড়ের মকবুল হোসেন। এসময় টিলা কাটার কাজে ব্যবহৃত একটি ট্রাকও জব্দ করা হয়। এদিকে, ৫ সেপ্টেম্বর সিলেট মহানগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের মিরাপাড়া এলাকায় টিলা কাটার খবর পেয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে টিলা কাটায় নিয়োজিতরা পালিয়ে যায়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জৈন্তাপুরের চিকনাগুল, ফতেহপুর, চারিকাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে টিলা কেটে মাটি বিক্রি চলছে। একই উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের গোয়াবাড়ি এলাকায় পাথর উত্তোলনের জন্য দেদারছে চলছে টিলা কাটা। এ ছাড়া গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের বারকুট, নিশ্চিন্ত, বাঘা ইউনিয়নের পরগণা, আমুড়ার একমাইল ও আমনির বাজার, লক্ষণাবন্দের ফুলসাইন্দ গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ঘোষগাঁও ও রণকেলি এলাকায় চলছে টিলা কাটা। সিলেট সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর, হাওলাদারপাড়া, পীরেরবাজার ও আলীবাহার চা বাগান সংলগ্ন এলাকায় অনেকটা প্রকাশ্যেই চলছে টিলা কর্তন।

টিলা কাটা প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদফতর সিলেটের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন জানান, পরিবেশ নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি ছাড়া শুধু আইন দিয়ে টিলাকাটা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। আর এতে সমাজের সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, জৈন্তাপুর ও গোলাপগঞ্জে টিলা কাটার অভিযোগে অনেক অভিযান হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, জেল-জরিমানা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর