বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিলেটের সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটের সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ

সিলেটের সড়ক ও মহাসড়কগুলো যেন পরিণত হয়েছে ‘মৃত্যুফাঁদে’। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। কেউ হারাচ্ছেন প্রাণ, কেউ হয়ে যাচ্ছেন জীবনের জন্য পঙ্গু। চলতি মাসে সিলেটে অন্তত ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। এর মধ্যে একই পরিবারের একাধিক সদস্যও রয়েছেন। বেশির ভাগ দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী ও সিএনজি অটোরিকশা যাত্রীদের প্রাণহানি ঘটছে। লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ বাসচালক, মহাসড়কে অবৈধভাবে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল ও বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর ফলে দিন দিন দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করছে সচেতন মহল। সিলেটে ঘন ঘন দুর্ঘটনার জন্য বেশকিছু কারণকে দায়ী করছে সচেতন মহল। এর মধ্যে অন্যতম মহাসড়কে অবৈধভাবে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল ও বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালনা। সরেজমিন দেখা গেছে, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে অবৈধভাবে চলছে দেদার সিএনজিচালিত অটোরিকশা। অভিযোগ রয়েছে, মাসোহারার বিনিময়ে পুলিশ ‘ম্যানেজ’ করেই মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল করে। নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে অটোরিকশা চালকদের নির্দিষ্ট টোকেন দেওয়া হয়। ওই টোকেন দেখিয়ে মহাসড়কে চলাচল করে অটোরিকশা। আর টোকেনবিহীন অটোরিকশা পেলেই মামলা ধরিয়ে দেয় পুলিশ। এ ছাড়া সড়ক ও মহাসড়কে ‘টিনএজার’দের বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি ও কারণ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ সিলেট অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্ল্যাহ জানান, সিলেটের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় নানা কারণে ইদানীং দুর্ঘটনা বেড়েছে। সিলেট-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কে অনেকেই বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। রাস্তা ভালো হওয়ায় পর্যটকরা এ মহাসড়কে গতিসীমা মানেন না। সিএনজি অটোরিকশাগুলোও চলে বেপরোয়া গতিতে। তাই দুর্ঘটনা ঘটছে। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙা রয়েছে। তাই চালকদের আঁকাবাঁকাভাবে গাড়ি চালাতে হয়। বৃষ্টি হলে রাস্তা পিচ্ছিল হয়েও দুর্ঘটনা ঘটায়। এ ছাড়া এ মহাসড়কে প্রচুর থ্রি-হুইলার অবৈধভাবে চলাচল করে। এসব গাড়ির চালকদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল প্রসঙ্গে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিনই অভিযান হয়। মামলা দেওয়া হয়। এর পরও বন্ধ করা যাচ্ছে না অটোরিকশা চলাচল। এ ছাড়া কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ফৌজদারি মামলা হচ্ছে। ভিকটিম বা তার পরিবার মামলা না করলে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। গতকাল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের কাজলসার নোয়াগ্রাম এলাকায় পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে জয়নাল আবেদীন নামে এক মোটরসাইকেল চালক নিহত হন। তিনি ওই উপজেলার খাসেরা গ্রামের আবদুল আজিজের ছেলে। এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর সিলেট-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের সালুটিকর মিত্রিমহল এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল্লাহ ইসহাক ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম. হাফিজুর রশীদ নিহত হন। বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল নিয়ে ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে তারা দুজন নিহত হন। ১৫ সেপ্টেম্বর সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের শাহবাগ মহিদপুরে বাস ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। তারা হলেন কানাইঘাট উপজেলার সুতারগ্রামের বাসিন্দা মেহেদী হাসান ও মাহাদী হাসান রাফাত। তারা আপন চাচাতো ভাই ও শিক্ষার্থী। ১০ সেপ্টেম্বর সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের তাজপুরে প্রাইভেট কার চাপায় মা ও ছেলের মৃত্যু হয়। রাস্তা পারাপারের সময় বেপরোয়া গতির একটি প্রাইভেট কার চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজার এলাকার শুক্কুর আলীর স্ত্রী সালমা বেগম ও তার ছেলে আবদুল কাইয়ূম। একই দিন সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের চারখাইয়ে ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ফখরুল ইসলাম নামে আওয়ামী লীগের এক নেতা নিহত হন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর