শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

খালাস পাওয়া আসামির পুনর্বিচারে যাবজ্জীবন

কমডোর গোলাম রব্বানী হত্যা মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষী কমডোর গোলাম রব্বানী হত্যা মামলায় আগে খালাস পাওয়া আসামি সাইফুল ইসলাম প্রকাশ বিলাই সাইফুলকে পুনর্বিচারে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রবিউল আলম এ রায় দেন। দন্ডিত মো. সাইফুল প্রকাশ বিলাই সাইফুল প্রথম দফা বিচারে খালাস পেয়েছিলেন। রায়ের সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাকে সাজা পরোয়ানা মূলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।  

ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট অশোক কুমার দাশ বলেন, আসামি সাইফুল ইসলামকে ২০০৫ সালে দেওয়া রায়ে খালাস দেওয়া হয়েছিল। সেই আদেশের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ হাই কোর্টে আপিল করলে ‘হাই কোর্ট আপিল আদেশে বলেছিলেন, আসামি সাইফুলের বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষ্য বিচারিক আদালতে নেওয়া হয়েছিল সেগুলো যথাযথভাবে পর্যালোচনা ছাড়াই রায় দেওয়া হয়েছিল। সাইফুলের বিষয়ে নতুন করে রায় দিতে নিম্ন আদালতকে আদেশ দিয়েছিল। এই আদেশের পর দুজন সাক্ষীকে পুনঃতলব করে সাক্ষ্য নেওয়া হয়। উভয় পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। আদালত আসামি সাইফুলকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন, ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের কারাদন্ড দিয়েছেন। 

মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল মাইক্রোবাসে করে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় নগরের পাঁচলাইশে গুলিবিদ্ধ হন। ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা রব্বানী নৌ-পরিবহন বিভাগের  মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও জেলহত্যা  মামলায় তিনি রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন।

সে সময় তিনি কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (কেইপিজেড) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। ওই ঘটনায় কেইপিজেডের সাবেক পরিচালক আবু নাসের চৌধুরী ও কর্মচারী হুমায়ুন কবির চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে নগরের পাঁচলাইশ থানায় ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল কেইপিজেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম এমতাজুল ইসলাম এজাহার দায়ের করেন। ওই বছরের ২৮ আগস্ট সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ওই হত?্যা মামলার রায়ে ২০০৫ সালে চট্টগ্রামের দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল মোহাম্মদ সেলিম, মোহাম্মদ হাশেম ও আবদুল মালেক সোহেল নামের তিনজন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়। অন্য দুই আসামি কেইপিজেডের সাবেক মহাব্যবস্থাপক আবু নাসের চৌধুরী ও সাবেক প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে দেওয়া হয় পাঁচ বছর করে কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জারিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদন্ড। খালাস দেওয়া হয় এ মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি মানসুর আলম ও সাইফুল ইসলামকে। আপিল শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ এ মামলার রায় ঘোষণার পর ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর আদেশের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। হাই কোর্টের ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এ হত্যা মামলায় দুই আসামিকে ‘কম সাজা’ দেওয়া হলেও বিচারিক আদালত এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেনি।  হাই কোর্ট আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ুন কবিরের সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন  কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেয়। এ ছাড়া নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া তিন আসামির মধ্যে মো. হাশেম ও সোহেল হাই কোর্টে খালাস পান, মো. সেলিমের যাবজ্জীবন বহাল থাকে। আর খালাস পাওয়া আসামি সাইফুলের ব্যাপারে নতুন রায় দিতে নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের ওই আদেশের পর চট্টগ্রামের দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করেছিলেন দুই আসামি- চট্টগ্রামের কেইপিজেডে সাবেক মহাব্যবস্থাপক আবু নাসের চৌধুরী ও মো. সেলিম। খালাস পাওয়া আসামিদের মধ্যে সাইফুলের বিরুদ্ধে বাদী পক্ষ হাই কোর্টে আপিল করলেও মানসুর আলমের বিরুদ্ধে করেনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর