শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রোগী সেজে ভারত গিয়ে মাদক আনত ওরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোগী সেজে ভারত গিয়ে মাদক আনত ওরা

নতুন মাদক ট্যাপেন্টাডল

ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত ট্যাপেন্টাডল ওষুধকে মাদক হিসেবে সেবন ও বিক্রি করছেন মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীরা। ট্যাপেন্টাডলকে ‘খ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ২০২০ সালের ৮ জুলাই গেজেট প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকার। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর ও ঢাবির ফার্মেসি বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে ‘খ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য হিসেবে ট্যাপেন্টাডলকে তফসিলভুক্ত করা হয়। মাদক হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও এর বেচাকেনা, চোরাচালান বন্ধ নেই। বুধবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল থেকে ট্যাপেন্টাডলের চালান জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। ৪২ হাজার ২০০ পিস ট্যাপেন্টাডলসহ কলকাতা থেকে আসা পাঁচ যাত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন মূল হোতা মো. সোলাইমান, হৃদয় ইসলাম রাজু, এ কে এম আবু সাইদ, আশীক সাইফ ও মো. ফারুক। ডিএনসি বলছে, চক্রের এক সদস্যকে রোগী সাজিয়ে ভারতে পাঠানো হতো। এরপর সেখান থেকে বিমানে বিপুল পরিমাণ মাদক নিয়ে ফিরে আসত চক্রের প্রত্যেক সদস্য। প্রতি মাসে তারা অন্তত চার-পাঁচ বার যাতায়াত করত। ব্যবসায়িক ভিসা থাকায় কেউ সন্দেহ করত না। চকলেটের প্যাকেটে তারা ট্যাপেন্টাডল ওষুধ নিয়ে এসেছিল। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ডিএনসির ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী। তিনি বলেন, বুধবার রাতে বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল এলাকা থেকে পাঁচ যাত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। সোলাইমান মাসে চার-পাঁচ বার কলকাতা যাওয়া-আসা করেন। প্রতিবারই বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে ট্যাপেন্টাডলসহ অন্যান্য অবৈধ মাদক নিয়ে আসতেন। এ কাজে তিনি একাধিক সহযোগীকে ব্যবহার করতেন। আগস্টে চক্রের একজন সদস্যকে ফেনসিডিলসহ বিমানবন্দরে গ্রেফতার করা হয়। ব্যবসার কৌশল হিসেবে তারা কলকাতা যাওয়ার ক্ষেত্রে যশোর বেনাপোল এবং দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে শাহজালাল বিমানবন্দরকে রুট হিসেবে ব্যবহার করত। মজিবুর রহমান বলেন, চক্রের সদস্যরা মূলত রোগীর চিকিৎসার কথা বলে ভারত যেত। এরপর কয়েকদিন অবস্থান শেষে বিপুল পরিমাণ মাদক ও অবৈধ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে দেশে ফিরে আসত। সোলাইমান পেশায় ব্যবসায়ী। বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে। ঝিনাইদহে রাজুর বাড়ি। পেশায় টিসিবির ডিলার। প্রাইভেট কোম্পানির ম্যানেজার আবু সাইদের বাড়ি নরসিংদীতে। সাইফ একটি প্রাইভেট কোম্পানির এক্সিকিউটিভ। তার বাড়ি ঢাকার কলাবাগানে। কক্সবাজারের বাসিন্দা ফারুক পেশায় স্টেশনারি দোকান ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটের প্রতি পাতার ভারতীয় দাম ২৫০ রুপি। এক পাতায় ১০টি করে ট্যাবলেট থাকে। এগুলো এনে প্রতি পিস ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। মূল হোতা সোলাইমান রোগী সেজে টেকনিক অবলম্বন করে মাদক আনত। ডিএনসির তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলছেন, দীর্ঘ সময় দেশে ইয়াবার একক অধিপত্য থাকলেও সম্প্রতি নিত্যনতুন মাদকের আবির্ভাব হতে দেখা গেছে। মূলত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর ফাঁকি দিতেই নতুন মাদক ট্যাপেন্টাডলের দিকে ঝুঁকছেন সেবনকারীরা। মাদকসেবীদের মধ্যেও ইয়াবার বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এটি। তবে এটি নেশা হিসেবে সেবন করলে কিডনি-লিভার ড্যামেজ, ব্রেন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর