শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গবাদি পশু লালনপালনের চিত্র পাল্টাচ্ছে ‘স্মার্ট খামারি’ প্রকল্প

শরিফুল ইসলাম সীমান্ত

গবাদি পশু লালনপালনের চিত্র পাল্টাচ্ছে ‘স্মার্ট খামারি’ প্রকল্প

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প’-এর (এলডিডিপি) অধীনে বদলে যাচ্ছে দেশের পশু পালনের চিত্র। গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে যুগোপযোগী হয়ে উঠছে পশুপালন পদ্ধতি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের উদ্যোক্তা ও খামারিদের ‘স্মার্ট খামারি’ হিসেবে গড়ে তুলতে দেশজুড়ে চালানো হচ্ছে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরে। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। বাকি অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক। ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংকের দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী জেলার আওতাধীন প্রোডিউসার গ্রুপগুলো পরিদর্শন করে প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র কৃষি বিশেষজ্ঞ সামিনা ইয়াসমিন ও টাস্ক টিম লিডার আমাদু বা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারি এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাংস ও দুগ্ধজাত বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে প্রাণিসম্পদ খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের উদ্দেশ্য নিয়ে দেশের ৬১ জেলায় নানামুখী কার্যক্রম চালানো হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান কারিগরি সমন্বয়ক ড. মো গোলাম রাব্বানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রশিক্ষণ ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার সহায়তায় খামারিদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে তাদের শিক্ষিত ও স্মার্ট খামারি হিসেবে গড়ে তোলাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। গবাদিপশুর সংখ্যা না বাড়িয়ে অল্প জায়গায় আধুনিক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে কীভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায় সেটি নিয়ে কাজ করেছি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, গবাদিপশুর জন্য উন্নত খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ, প্রাণিস্বাস্থ্য এবং কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খামারিদের প্রতিটি গবাদিপশুর উৎপাদনশীলতা ২০% বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। খামারিদের নিয়ে সারা দেশে গড়ে তোলা হয়েছে ৫৫০০ প্রাণিজাত পণ্য উৎপাদনকারী সমিতি (প্রোডিউসার গ্রুপ)। পণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে তৈরি হয়েছে মার্কেট লিংকেজ ও ভ্যালু চেইন। আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন- গরুর দুধ দোহন, মিল্ক ক্রিম সেপারেটর, গবাদিপশুর জন্য সুষম খাদ্য প্রস্তুতকরণ, আধুনিক ঘাস কাটার মেশিনসহ নানাবিধ উন্নত যন্ত্রপাতি বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রয় করে খামারিদের কাছে সহজলভ্য করা হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য চালু করা হয়েছে প্রাণিবীমা। এছাড়া, প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি চালু হয়েছে স্কুলমিল্ক প্রোগ্রাম। ৬১ জেলার ৩০০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৫ হাজার শিশুকে এই প্রোগ্রামের আওতায় আনা হয়েছে। নিয়মিত স্কুলে আসতে উৎসাহিতকরণ ও স্কুলগামী শিশুদের প্রাণিজ পুষ্টি নিশ্চিত করতে প্রতিদিন তাদের দেওয়া হচ্ছে দুধের প্যাকেট। সূত্র জানায়, প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের উৎপাদন দক্ষতা বাড়াতে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ। পশু পরিচর্যা, বিভিন্ন রোগবালাইয়ে করণীয়, উৎপাদন বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন পদ্ধতিসহ খামারিদের সংকট-সম্ভাবনা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এসব কর্মশালায়। পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়ের মাঝারি উদ্যোক্তাদেরও আনা হয়েছে সরকারি পর্যবেক্ষণের তালিকায়। তাদের যুক্ত করে বৃদ্ধি করা হচ্ছে মার্কেট লিংকেজ। উদ্যোক্তাদের আরও বেশি উৎসাহিত করতে চালু করা হয়েছে ‘ডেইরি আইকন’ পুরস্কার। ২০২২ সালে এই পুরস্কার পেয়েছেন ৩৯ জন এবং এ বছর পেয়েছেন ৪১ জন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর