শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে কোটি টাকার চাঁদায় বৈধ হয়েছে ব্যাটারি রিকশা

দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরীর অলিগলি

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীতে ১০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা অলিগলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিয়ে এসব রিকশা সড়কে চলছে। রাত হলে মূল সড়কেও উঠে আসে এসব রিকশা। বেপরোয়া গতি, দুর্ঘটনা, বিদ্যুতের অপচয়সহ নানা অভিযোগ থাকার পরও এসব রিকশার বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান নেই। প্রতি মাসে চালকদের কাছ থেকে কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় করে এসব রিকশাকে চলাচলের ‘বৈধতা’ দিচ্ছে অসাধু চক্র।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম শহরজুড়ে এখন ১০ হাজারের বেশি ব্যাটারি রিকশা চলছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম এসব রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় প্রভাবশালী এবং পুলিশের কিছু সদস্য নির্দিষ্ট চাঁদার বিনিময়ে এসব রিকশাকে চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা রিকশা মালিক ও চালকদের সমিতির নাম ভাঙিয়ে এসব চাঁদা আদায় করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর নাসিরাবাদ, পলিটেকনিক, হিলভিউ, হামজারবাগ, চকবাজার, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, হালিশহর, ইপিজেড, পতেঙ্গা, সদরঘাটসহ অন্তত ২০টি প্রান্তিক এলাকায় এসব রিকশার দাপট সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকায় গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ রিকশা দিনরাত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সরকারদলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে কিছু রাজনৈতিক ও শ্রমিক নেতা, স্থানীয় প্রভাবশালীরা ‘রিকশা চলাচলে কেউ বাধা দেবে না’ এমন আশ্বাস দিয়ে প্রতিটি রিকশা থেকে দিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে আদায় করে। সেই হিসাবে নগরীর ১০ হাজার রিকশা থেকে প্রতিদিন ১ কোটি টাকার বেশি চাঁদা ওঠে। পরে ওই চাঁদার ভাগ সংশ্লিষ্টদের কাছে চলে যায়।

জানা গেছে, নাসিরাবাদের পলিটেকনিক্যাল এলাকায় ‘ডিজিটাল টোকেন’ দিয়ে প্রতিনিয়ত চাঁদা তুলছে একটি চক্র। নগর যুবলীগের এক নেতা, যিনি ওই এলাকায় বেশ প্রভাবশালী- তার নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় কিছু যুবক চাঁদার বিনিময়ে টোকেন সরবরাহ করে এসব রিকশাকে চলাচলের সুযোগ দেয়। আবার ওই এলাকায় ওই চক্রের অনুমতি ছাড়া কেউ রিকশা চালাতে পারবে না। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে নির্যাতন করে পুলিশে তুলে দেওয়ারও অভিযোগ তুলেছেন কয়েকজন চালক। আর পুলিশের হাতে তুলে দিলে সেখানেও তাদের ‘খুশি’ করা ছাড়া রিকশা ছাড় করানোর কোনো সুযোগ নেই বলে জানান চালকরা।

চালকদের হিসেবে, পলিটেকনিক এলাকা, মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী সড়ক, সাউদার্ন মেডিকেল সড়ক, টেকনিক্যাল মোড, খুলশী কলোনি এলাকা পর্যন্ত প্রায় ২৫০টি রিকশা প্রতিদিন ২৫ হাজার টাকা করে চাঁদা দিচ্ছে। সেই হিসেবে শুধু এই স্পট থেকেই মাসে সাড়ে ৭ লাখ টাকা চাঁদা ওঠে। আর নগরীতে এই ধরনের স্পট আছে কমপক্ষে ২০টি। এই হিসাব অনুযায়ী- এসব স্পট থেকে মাসে চাঁদা ওঠে দেড় কোটি টাকা।

বহদ্দারহাট এলাকার এক প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘এগুলো নিয়ে হয়তো কারও মাথাব্যথা নেই। কিন্তু এসব ছোট ছোট বিষয়গুলো জাতীয় নির্বাচনেও অঞ্চলভিত্তিক প্রভাব রাখে।’ তিনি এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপির সহযোগিতা কামনা করেন।

শুলকবহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম বলেন, ‘টাকা উত্তোলনের বিষয়ে আমিও শুনেছি। কিন্তু আমার তো ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নেই।’ এ বিষয়ে মেয়র ও ডিসি ট্রাফিককে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার জয়নাল আবেদিন টিটু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। দিনের বেলা এগুলো মূল সড়কে আসে না। আসলেই জব্দ করা হয়। লোকবল স্বল্পতার কারণে অলিগলিতে সব সময় অভিযান চালানো সম্ভব হয় না।’ খুলশী ও কোতোয়ালি থানার উচ্চপদস্থ দুজন কর্মকর্তা বলেন, ‘থানা পুলিশ সব সময় ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে। কিন্তু এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর দায়িত্ব ট্রাফিকের। ট্রাফিক বিভাগ থেকে চাইলে থানা পুলিশ সহযোগিতা করতে পারে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর