বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সবুজের শহরে শব্দদূষণের উৎপাত

খুলনায় মানুষের শ্রবণশক্তি কমছে, লোপ পাচ্ছে চিন্তাশক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

সবুজের শহরে শব্দদূষণের উৎপাত

খুলনা নগরে শব্দদূষণ সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়েছে। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার, উচ্চ শব্দে সাউন্ড সিস্টেম, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ঢালাই মেশিন ও অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচল শব্দদূষণের মূল কারণ। নগরের বিভিন্ন স্থানে শব্দের সর্বোচ্চমাত্রা ১৩২ ডেসিবল পর্যন্ত শনাক্ত করেছে পরিবেশ অধিদফতর। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁঁকিতে পড়ছে নগরবাসী।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী নীরব ঘোষিত এলাকায় সর্বোচ্চ ৫০ ডেসিবল, আবাসিক এলাকা ৫৫ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকা ৭০ ডেসিবল, শিল্প এলাকায় ৭৫ ডেসিবলের বেশি মাত্রার শব্দ সৃষ্টির সুযোগ নেই। কিন্তু খুলনা নগরে বিভিন্ন এলাকায় সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দদূষণ পাওয়া গেছে।

খুলনা পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি মাসের শুরুতে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে ৬৯.৭ ডেসিবল, শান্তিধাম মোড়ে ৬২.৮ ও পিটিআই টুটপাড়া মোড়ে ৫৮.৪ ডেসিবল শব্দের মাত্রা ছিল।

এর আগে একই প্রতিষ্ঠানে তথ্যে গল্লামারী মোড়ে ৮২ ডেসিবল, ফুলবাড়ি গেটে ৭৮ ডেসিবল ডাকবাংলা মোড়ে ৭৫, বিএল কলেজ মোড়ে ৭৩, ফুলবাড়ি গেটে ৭৮ ডেসিবল শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা দেখা যায়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, হাসপাতাল গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতরের সামনে পরিবহনের হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ। কিন্তু আইন অমান্য করে যত্রতত্র বাজানো হচ্ছে উচ্চৈঃশব্দের হর্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুলনায় অতিরিক্ত শব্দদূষণের কারণে মানুষের শ্রবণশক্তি ও মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি লোপ পাচ্ছে। ৫০ ডেসিবলের চেয়ে উচ্চ শব্দ, উচ্চ রক্তচাপ, ৬৫ ডেসিবলের উচ্চ শব্দ হৃদরোগ, ১২০ ডেসিবলের চেয়ে উচ্চ শব্দ শ্রবণশক্তি নষ্ট করে দিতে পারে।

পরিবেশ অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন জানান, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, নীরব ঘোষিত এলাকায় শব্দ সৃষ্টি নির্দিষ্ট    মাত্রায় থাকবে।

তবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকায় শব্দ সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করেছে। পরিবেশ আইন     মানতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা জানান তিনি।

এদিকে গতকাল ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের করণীয় এবং নীরব এলাকা বাস্তবায়ন অগ্রগতি’ শীর্ষক কর্মশালা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন   কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন। এতে    বলা হয় শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালায়  আবাসিক এলাকার ৫০০ মিটারের মধ্যে শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।    গুরুত্বপূর্ণ কাজে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সর্বোচ্চ দিনে ৫ ঘণ্টা মানমাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে।

অনুমতি ছাড়া শব্দ সৃষ্টি করলে প্রথমবার অপরাধে এক মাস কারাদন্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড ও পরবর্তী প্রতিবার অপরাধের জন্য ৬ মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড দেওয়া যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর