রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আশিক-জাকির দ্বন্দ্বে জর্জর মিঠাপুকুর আওয়ামী লীগ

দুই গ্রুপের ১০ বছরের সংঘর্ষে আহত শতাধিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর উপজেলা) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আশিকুর রহমান ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের ১০ বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। এর ফলে সংগঠন জর্জর অবস্থায় রয়েছে- এ অভিমত সাধারণ কর্মীদের। আশিকুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। জাকির হোসেন তিনবার উপজেলা চেয়ারম্যান। দুজনই প্রভাবশালী। দুই পক্ষের রয়েছে পেশিশক্তি। দ্বন্দ্ব এতই তীব্র যে, দুই পক্ষ সম্মিলিত হয়ে গত ১০ বছরে সরকারি কিংবা দলীয় কোনো অনুষ্ঠান করেনি। করেছে পৃথকভাবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান পৃথকভাবে করা নিয়ে দুই পক্ষ ১০ বছরে কমপক্ষে ১৫ বার মুখোমুখি হয়েছে। এসব সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হলেও থানায় কোনো মামলা হয়নি। সর্বশেষ দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে শুক্রবার বিকালে। এ সময় এমপি আশিকুর রহমান ও তাঁর ছেলে রাশেক রহমান কেউ ছিলেন না। তার পরও সংঘর্ষে ওসিসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন। তবে কোনো পক্ষ মামলা কিংবা থানায় অভিযোগ করেনি। দীর্ঘদিন ধরে মিঠাপুকুর উপজেলার এমপি আশিকুর রহমান। তবে ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলা ‘জামায়াত-শিবিরের এলাকা’ নামে পরিচিত। বেশ কয়েকজন জামায়াত নেতা ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। আওয়ামী লীগের নিজের মধ্যে মারামারি দেখে জামায়াত-শিবির এবং বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মীকে চাপা উল্লাস করতে দেখা গেছে। এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের পৃথক দুটি গ্রুপ পৃথকভাবে দলীয় এবং জাতীয় কর্মসূচি পালন করায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভেদের দেয়াল তৈরি হয়েছে। দেয়ালটি অপসারণের কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুটি গ্রুপ নিজ নিজ ‘নীতি’ অবস্থানে অটল। দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব ঘিরে যে সহিংসতার রূপ নিচ্ছে তা সাধারণ মানুষ ভালো চোখে দেখছে না। সাধারণ মানুষের আশঙ্কা দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব যে কোনো সময় প্রাণহানি ঘটাতে পারে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এ দ্বন্দ্ব নিরসন করতে না পারলে জামায়াত অধ্যুষিত এ আসনে আওয়ামী লীগকে চরম মাশুল দিতে হবে- এমনটা আশঙ্কা করেন দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীরা।

শুক্রবারের সংঘর্ষের বিষয়ে জাকির হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, তিনি ৩৭ বছর ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর অনুষ্ঠানে কমপক্ষে ৩-৪ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। তাঁর মতে, তাঁর বিরুদ্ধবাদীদের অনুষ্ঠানে তিন শর বেশি মানুষ হয় না। উপজেলায় তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখে তাঁদের হিংসা হচ্ছে। হিংসা থেকেই বারবার তাঁর লোকজনের ওপর হামলা করা হচ্ছে।

এদিকে এমপি আশিকুর রহমান ও তাঁর ছেলে রাশেক রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাঁদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এমপির সর্মথক নেতা চেংমারী ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম টুটুল বলেন, এমপি ও তাঁর ছেলে দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ হলরুমে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান করছিলাম। ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আসছিল। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যানের লোকজনের সঙ্গে সামান্য অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।’ টুটুল মনে করেন নিজেদের ব্যর্থতার কারণেই দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে।

মিঠাপুকুর থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, শুক্রবারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর