বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কিশোর গ্যাং নিয়ে তটস্থ নারায়ণগঞ্জ

রাজনৈতিক শেল্টারে বেপরোয়া সদস্যরা

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

কিশোর গ্যাং নিয়ে তটস্থ নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। এদের কারণে বেড়েছে খুন-খারাবির ঘটনা। প্রায়ই নারায়ণগঞ্জের কোনো না কোনো এলাকাতে চলছে শতাধিক কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব বা মহড়া। কখনো ধারালো অস্ত্র আবার কখনো আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে দেখা যায় এদের। পান থেকে চুন খসলেই কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন বা গুরুতর আহত হচ্ছে প্রতিপক্ষ। এমনকি পুলিশের কর্মকর্তাও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের শেল্টারে বেপরোয়া হয়ে উঠতে শুরু করেছে এসব গ্যাং। বিশেষ করে রাজনৈতিক মিছিলে অংশগ্রহণ ও নেতা হওয়ার বাসনা থেকেই কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে। নিজের পরিচিত বাড়াতে বিভিন্ন সময় তুচ্ছ ঘটনায় মহড়া দিয়ে পাড়া-মহল্লায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। বিগত দিনে কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষে ডজনখানেক হত্যাকা হয়েছে। জানা গেছে, চলতি বছরের ১৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইরে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে তান্ডব চালিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মাসদাইর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে থেকে ঈদগাহ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় নেসার ও সাব্বির বাহিনীর শতাধিক সন্ত্রাসী এ তাণ্ডব চালায়। এ সময় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আওয়ামী লীগের অফিসসহ রেস্টুরেন্ট, মুদি দোকান ও বাসাবাড়িতে লুটপাট চালায়। সড়কে রিকশাচালক এমনকি রূপগঞ্জ থানার এসআই মারুফকে ছুরি দিয়ে আঘাতসহ অন্তত ১০ থেকে ১২ জনকে কুপিয়ে আহত করে। মহড়ায় রাস্তায় তারা যাকে পেয়েছে তাকেই মারধরসহ কুপিয়ে আহত করেছে। চলতি বছরের ৭ জুলাই রাতে ফতুল্লার মাসদাইর বোয়ালিয়া খাল এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ছুরিকাঘাতে নয়ন সিকদার (১৭) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়। গত ১৫ মে ফতুল্লায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নাঈম (১৩) নামে অপর কিশোরকে কুপিয়ে জখম করে। ২৬ মার্চ ফতুল্লার মাসদাইর পাকাপুলে মোবাইল ফোন নিয়ে বিরোধে অন্তত আটটি দোকানঘর ভাঙচুর করে তান্ডব চালিয়েছে মানিকের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং।

৫ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লার দেলপাড়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ কার্যালয়ের কাছে সজীব (১৭) নামে কিশোর খুন হয়েছে। ২৭ জুলাই রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের বাগমারায় রাসেলের নেতৃত্বে আট-দশজন ‘কিশোরের’ সংঘবদ্ধ হামলায় প্রাণ হারায় কলেজছাত্র ইমন। একই বছরের ১৭ মে ফতুল্লার ইসদাইরে সহপাঠি কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে ধ্রুব নামে দশম শ্রেণির ছাত্র খুন হয়। ১৬ মে রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগে বাড়ি থেকে ফোনে ডেকে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ফলে সুব্রত মন্ডল জয় (২২) নামে যুবক সাত দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ১১ মে নারায়ণগঞ্জের নন্দীপাড়ায় কিশোর গ্যাংয়ের কোপানোর ভিডিও চিত্র মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিশোর গ্যাংয়ের মূল শক্তি রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ থেকে। কারণ বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে লোক সমাগম ঘটাতে পাড়া-মহল্লার কিশোরদের ব্যবহার করছে। এতে কিশোররা এলাকার রাজনৈতিক বড় ভাইদের শেল্টার পাচ্ছে। বিভিন্ন সময় প্রভাব খাটাতে কিশোর গ্যাংয়ের বাহিনীকে এলাকাভিত্তিক দ্বন্দ্বে সংঘর্ষে ব্যবহার করা হচ্ছে। কেউ এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে দল বেঁধে এলাকার দোকানপাট বাড়িঘর ভাঙচুর করে তান্ডব চালায়

এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, কিশোর গ্যাং দমনে পুলিশ কঠোর রয়েছে। গত ১ বছরে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ৮২টি মামলা হয়েছে। আটক হয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের ২৩৬ সদস্য।

তিনি আরও জানান, সমস্যা হচ্ছে এসব অপরাধী কিশোর হওয়া তাদের অপরাধ না করা পর্যন্ত আটক করা যায় না। তবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হয়তো কোনো মিটিং মিছিলে এদের কেউ না কেউ নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে। তবে কিশোর হওয়ায় কিশোর অপরাধী কোনো অপরাধ না করা পর্যন্ত আটক করা যাচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর