বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নতুন রূপ পাচ্ছে চট্টগ্রাম

শেষ হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকার পাঁচ প্রকল্প

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

নতুন রূপ পাচ্ছে চট্টগ্রাম

চলতি বছরের বাকি আর মাত্র তিন মাস। এই তিন মাসে চট্টগ্রাম নগরে একাধিক প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। কর্ণফুলী টানেল, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাকলিয়া এক্সেস রোড, কালচারাল কমপ্লেক্সসহ আরও কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নতুন রূপ পাবে চট্টগ্রাম। অর্থনীতি, যোগাযোগ, সংস্কৃতি, খেলাধুলায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। অর্থনীতি বিশ্লেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, এ প্রকল্পগুলো চট্টগ্রামের অর্থনীতি, যোগাযোগসহ সব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে আমাদের উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় পদার্পণের যে লক্ষ্য সেটা বাস্তবায়নে প্রকল্পগুলো ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলটির উদ্বোধন হবে শিগগিরই। এই টানেলের ৯৮.৭০ শতাংশ কাজ শেষ। এখন টুকটাক কাজ শেষে উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে। এ প্রকল্পে দুটি টিউবের ভিতর চার লেনের সড়ক নির্মিত হয়েছে। যেটি দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকে নগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। ফলে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজও প্রায় শেষ। বন্যার কারণে কিছুটা বাড়তি সময় লাগলেও শিগগিরই এ রেলপথে ‘ট্রায়াল রান’ করবে রেলওয়ে। ১৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের সব ঠিক থাকলে বছরের শেষে ট্রেনে করে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যাওয়া যাবে। পূরণ হবে দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। কর্ণফুলী টানেলের পরপর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকায় নির্মিতব্য ১৬ কিমির এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৯০ ভাগ কাজ শেষ। এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হলে চট্টগ্রাম নগরের যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। মাত্র ২০ মিনিটে শহর থেকে বিমানবন্দরে যাতায়াত করা যাবে। লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বন্দর-ইপিজেডসহ অন্যান্য এলাকাগুলোর যানজট অনেকাংশে কমবে। ২২০ কোটি টাকায় সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক পর্যন্ত চার লেনের সংযোগ সড়ক নির্মাণও প্রায় শেষ। ইতোমধ্যে এই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে। তবে কিছু কার্পেটিং ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ বাকি আছে। শিগগিরই ৬০ ফুট প্রশস্ত সড়কটি পুরোদমে চালু হবে। আশপাশের এলাকা সংযুক্ত করতে ২০টি সংযোগ সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এই সড়ক। যা যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখবে। সহজ হবে দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী যাত্রীদের যাতায়াত। ২৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের কাজও ৯৮ ভাগ শেষ। উদ্বোধনের দিন-তারিখ ঠিক না হলেও আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার খুলে দেওয়া হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গবেষক, সাংবাদিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তথ্যের চাহিদা পূরণ হবে। এখানে জেনারেল লাইব্রেরি, চিলড্রেন লাইব্রেরি, রেফারেন্স লাইব্রেরিসহ অন্যান্য সুবিধা রাখা হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামকে নতুন রূপে সাজানোর প্রকল্প নিয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। সংস্থার প্রধান ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানিয়েছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে এই স্টেডিয়ামটির চেহারা আমূল বদলে যাবে। এখানে একটি ফুটবল মাঠ ছাড়াও ক্রিকেট ও অন্যান্য খেলার প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা ব্লক তৈরি হবে। পাশাপাশি ওয়াকওয়েসহ অন্যান্য ব্যবস্থা রাখা হবে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে মাঠটি ঘিরে যে অচলাবস্থা ছিল তা নিরসন হবে। এতে খেলাধুলায় অগ্রগতি আসবে।

এসব প্রকল্প ছাড়াও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১১ হাজার কোটি টাকায় চারটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। এ ছাড়া মিরসরাই ইকোনমিক জোন, আউটার রিং রোড, চমেক হাসপাতাল ক্যান্সার ইউনিটসহ বেশকিছু প্রকল্পের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুফল আসতে শুরু করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড মেম্বার স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, চলমান প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের চেহারা বদলে যাবে। অর্থনীতি ও যোগাযোগে গতি নিয়ে আসবে। বিশেষ করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। বঙ্গবন্ধু টানেলের সুফল পর্যায়ক্রমে আসতে শুরু করবে। আউটার রিং রোডসহ কানেকটিং রোডগুলো যোগাযোগে স্বস্তি নিয়ে আসবে। তবে সর্বোচ্চ সুফল পেতে দ্রুত সময়ে আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর