বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
সেমিনারে বক্তারা

ইইউ-বাংলাদেশ বাণিজ্য চ্যালেঞ্জে

চলমান সংকট থেকে উত্তরণ চান ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম সহযোগী হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশে বাণিজ্যের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের পাশাপাশি পাদুকা, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, মেডিকেল, মেশিনারিজ, কেমিক্যাল সেক্টরে ইইউকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এসব সেক্টরে বিদ্যমান যে সব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা উত্তরণ করে ব্যবসায়ী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার এবং ইইউ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে পরিচালিত ইউরোপিয়ান কোম্পানিগুলোর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তারের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমাদের দেশে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিনিয়োগকারীদের বলব, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেন, বাংলাদেশ ভালো জায়গা, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে আপনারা ঠকবেন না। এ বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমরা ৫০ বছরের সম্পর্কপূর্তি উদযাপন করেছি। ১ মাস আগে আমি আমস্টারডামে এরকম একটি চমৎকার সেমিনার করেছি। বাংলাদেশে সমস্যা আছে, তবে সুযোগও আছে অনেক। আমাদের ব্যাংকিং সমস্যা আছে। আমরা একমত যে সমস্যা আছে। ব্যবসায়ী এবং সরকার মিলে আমরা আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করব। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে বিডা বদ্ধপরিকর এবং চলতি বছরের ডিসেম্বরে বিডার ‘ওএসএস’ প্ল্যাটফরম হতে বিনিয়োগকারীদের জন্য সব ধরনের সেবা স্বল্প সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করা হবে। তিনি জানান, আমাদের স্থানীয় বাজারের পরিমাণও বেশ বড়, যেখানে ইইউ কোম্পানিসমূহ বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো স্থানীয় উদ্যোক্তা খুঁজে পেতে বিডা সহযোগিতা করবে বলেও তিনি জানান।

অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে ইইউর বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ : কোম্পানিজ প্রেক্ষিত’ এবং ‘জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশের কর্মপন্থা’ বিষয়ক দুটি বিষয় ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাসের কনস্যুল জোরেট মারভেলিন-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে ইইউর বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ : কোম্পানিজ প্রেক্ষিত’ বিষয়ক সেশনে এয়ারবাসের আবাসিক প্রতিনিধি মুরাদ বুরোফালা, লাফাজ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও ইকবাল চৌধুরী, পেট্রোম্যাক্স এলপিজি লিমিটেডের সিইও মাসিহ নিয়াজি এবং জালো নিটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরিয়া লোপেজ অংশগ্রহণ করেন। এয়ারবাসের আবাসিক প্রতিনিধি বাংলাদেশের মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর জোরারোপ করেন।

ইকবাল চৌধুরী বলেন, ইইউ কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ আকর্ষণে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই নীতি সহায়তা এবং জ্বালানি নিরাপত্তা একান্ত জরুরি। মাসিহ নিয়াজি বাংলাদেশের অবকাঠামো, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রস্তাব করেন। নুরিয়া লোপেজ বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে, সেই সঙ্গে বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ বাড়ানোর ওপর জোরারোপ জরুরি। তিনি আরও জানান, শিগগিরই ইইউ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স-এর কার্যক্রম শুরু করা হবে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ‘জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশের কর্মপন্থা’ বিষয়ক সেশনে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিজেএমইএর সহসভাপতি মিরান আলী, বাংলাদেশ বাইসাইকেল অ্যান্ড পার্টস ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মোহাম্মদ মোশতাক আহমেদ তানভীর, বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ এবং এইচঅ্যান্ডএম-এর রিজিওন্যাল কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমান অংশগ্রহণ করেন।

বৈশি^ক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোরারোপ করেন জিয়াউর রহমান। মোহাম্মদ মোশতাক আহমেদ তানভীর বলেন, ইউরোপের বাজারে ই-বাইকের ব্যবহারের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যেটা আমাদের বাইসাইকেল শিল্পের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। মিরান আলী বলেন, তৈরি পোশাক খাতে সারা পৃথিবীতে আমাদের সবচেয়ে বেশি লিডসার্টিফাইড কোম্পানি রয়েছে, যেটি ইইউ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে সহায়তা করবে। রাসেল টি আহমেদ বলেন, বর্তমানে ৮৪টি বাংলাদেশি কোম্পানি তথ্য-প্রযুক্তি সেবা জাপানের বাজারে রপ্তানি করছে এবং বাংলাদেশের আইসিটি খাতের ইমেজ বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করতে হবে, সেই সঙ্গে এ খাতে জয়েন্টভেঞ্চার বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, বাংলাদেশ হতে চামড়া শিল্পের বৈশি^ক কোম্পানিগুলো পণ্য আমদানি করছে। ইউরোপিয়ান কোম্পানিকে বাংলাদেশের সাপ্লাইচেইন খাতে আরও বেশি হারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহ্বান জানান। বাংলাদেশের গ্রিন ফ্যাক্টরিসমূহের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ওপর তিনি জোরারোপ করেন। সেই সঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বাংলাদেশে ভোকেশন্যাল ট্রেনিং কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানান সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।

সেমিনারের ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের পর ইইউ-এর বাজারে পণ্য রপ্তানিতে আমরা বিদ্যমান শুল্ক সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হব। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও স্থানীয় শিল্পায়নকে ব্যাহত করবে। এমন বাস্তবতায় আমাদের পণ্যে রপ্তানির শুল্কমুক্ত সুবিধা ২০২৯ পর্যন্ত অব্যাহত রাখা জরুরি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর