রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আলোচনায় রাজশাহী-মুর্শিদাবাদ নৌরুট

♦ পরীক্ষামূলকভাবে চালুর উদ্যোগ ♦ এনবিআর ক্লিয়ারেন্সের অপেক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

ভৌগোলিকভাবে রাজশাহীর সঙ্গে ভারতের মুর্শিদাবাদ কাছাকাছি। এই নৈকট্য কাজে লাগাতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া উত্তরের জনপদ রাজশাহী লাভবান হবে। সেই সঙ্গে আমদানি ব্যয় কমার পাশাপাশি রাজস্ব বাড়বে বাংলাদেশের- এমনটাই মনে করছেন রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ। এক্ষেত্রে রাজশাহীর বিশাল পদ্মা নদী হতে পারে অন্যতম মাধ্যম। এনবিআর (কাস্টমস) ক্লিয়ারেন্স দিলেই চালু করা যেতে পারে রাজশাহী-মুর্শিদাবাদ নৌরুট। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, নৌরুটটি চালুর ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে তোড়জোড় দেখা গেলেও পরে তা ঝিমিয়ে পড়ে। তবে এবার ফের নৌরুট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নৌরুটটি চালুর প্রক্রিয়া ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে গত শুক্রবার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। প্রসঙ্গত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ এলাকার ধুলিয়ান হয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরসহ উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন নদীপথের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দেশের মধ্যে মোট সাতটি নৌবন্দর চালুর বিষয়ে ১৯৭৪ সালে তৎকালীন ভারত সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর হয়। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্থলবন্দর (পানামা পোর্ট) দিয়ে ভারতীয় আমদানিকৃত পণ্য ট্রাকে করে রাজশাহী হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। এসব আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে আছে ছোট-বড় পাথর, পিঁয়াজ, আদা, রসুন, ফলসহ নানা ভোগ্যপণ্য। যদি এই রুটে সড়কের বদলে নৌরুট চালু করা যায়, তবে আমদানি ব্যয় কমার পাশাপাশি একদিকে যেমন পরিবহন ব্যয় কমবে, তেমনি অল্প সময়ে অধিক পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে রাজশাহীতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকার পাশাপাশি ভারতেও সরাসরি রপ্তানি সম্ভব হবে। জানা গেছে, বিদ্যমান পদ্মা নদীপথে বার্জে করে সরাসরি মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী হয়ে রূপপুর ও পাকশী দিয়ে আরিচা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত পণ্য পরিবহন সম্ভব। এ জন্য রাজশাহী থেকে পাকশী পর্যন্ত পদ্মা নদীর কিছু অংশে ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন। আরও প্রয়োজন গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ নদীবন্দরে জনবলসহ এনবিআরের একটি দফতর স্থাপন। রাজশাহীর ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনীতি গতিশীল করতে পদ্মা নদী ব্যবহার করে ভারতের সঙ্গে নৌরুট চালু ও রাজশাহীতে নৌবন্দর স্থাপনের বিষয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে যাচ্ছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি উভয় দেশের নীতিনির্ধাকদের সঙ্গে দফায় দফায় এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সুলতানগঞ্জ পোর্টে কাস্টমসের কার্যক্রম চালুকরণ বিষয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন। গোদাগাড়ী-ধুলিয়ান নৌরুটের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে রাজশাহীর যে নৈকট্য সেটি কাজে লাগাতে পারলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হব। মালদার ধুলিয়ানের সঙ্গে আমাদের গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জের নৌরুট চালু করা গেলে এই রুটে ব্যবসার বিশাল সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। আমাদের আমদানি ব্যয় কমার পাশাপাশি রাজশাহীতে উৎপাদিত কৃষিপণ্যসহ অন্যসব পণ্য আমরা ভারতে রপ্তানি করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে রাজশাহী হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে আরিচা পর্যন্ত পদ্মা নদীতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীতে নাব্যতা আনা গেলে রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক নৌবন্দর প্রতিষ্ঠা করা যাবে। নৌপথটি চালু করতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’

বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা জানান, ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া থেকে বাংলাদেশের রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে নৌরুট চালুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এনবিআর ক্লিয়ারেন্স পেলে নৌরুটটি শিগগিরই চালু হবে। এরপর নৌরুটটি রাজশাহী পর্যন্ত বর্ধিত করে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর