নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামের’ নায়েবে আমির ইহছানুর রহমান ওরফে মুরাদ ওরফে সাইফকে তার পাঁচ সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা থেকে শনিবার গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ। পুলিশ বলছে, এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল ও ১৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- মো. সাখাওয়াতুল কবির ওরফে আনিস ওরফে রফিক (৪৫), বখতিয়ার রহমান ওরফে নাজমুল (৩০), ইউসুফ আলী সরকার (৩১) ও জাহেদুল ইসলাম ওরফে আশ্রাফ (৩৫)। গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যার পর সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি দল যাত্রাবাড়ীর কাজলা থেকে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের নায়েবে আমিরসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। তারা ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা করার জন্য একত্রিত হয়েছিলেন। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে এই জঙ্গিরা গোপনীয় মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান বলেন, এক বছর আগে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত চত্বর থেকে ছিনতাই করে নেওয়া আনসার আল ইসলামের দুই জঙ্গির একজন ‘অল্পের জন্য হাতছাড়া’ হয়ে গেছেন। সম্প্রতি একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তারা জানতে পারেন মাত্র দুই দিন আগে সেখান থেকে চলে গেছেন। তিনি প্রায় এক মাস ওই বাসায় ছিলেন। ওই অভিযানের ধারাবাহিকতায় শনিবার সন্ধ্যায় আনসার আল ইসলামের নায়েবে আমির ও তার চার সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কুকিচিনের সহায়তায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রধান শামিন মাহফুজকে আগে আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি জেলখানায় বসে যখন নতুন সংগঠনের পরিকল্পনা করেন, তখন সমমনা আরও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিলেন। মতাদর্শ ও পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে তারা একত্রিত হয়ে নতুন নামে কার্যক্রম শুরু করেন। এ জন্যই পরে আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে শামিন মাহফুজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘শারক্বীয়ার ৯৫ শতাংশের বেশি সদস্যকে গ্রেফতার করেছি। নেতৃত্ব পর্যায়ে যারা আছেন, তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা মনে করি, শামিন মাহফুজকে গ্রেফতারের মাধ্যমে শারক্বীয়ার যবনিকা টানতে পেরেছি।

সিটিটিসি জানায়, আনসার আল ইসলামের গ্রেফতার সদস্যদের মধ্যে সাখাওয়াতুল কবির ২০০২ সালে আনসার আল ইসলামের মাতৃসংগঠন জামিয়াতুল মুসলিমিনে যোগদানের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ায়। আনসার আল ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা এজাজ কারগিলের হাত ধরে তিনি সংগঠনে যোগ দেন। এর পর থেকে আমির এজাজ কারগিলের সঙ্গেই থাকতেন। এজাজ কারগিল পাকিস্তানে ড্রোন হামলায় মারা যান।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) সাখাওয়াতুল কবিরকে গ্রেফতার করেছিল। পরে ২০১৮ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার সংগঠনে যুক্ত হয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যে সংগঠনের শুরা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। গ্রেফতার ইহসানুর রহমান সংগঠনের আশকারি বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের কমান্ডার। ২০২০ সালে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেক্সটাইলে মাস্টার্স করেছেন। ২০১৭ সাল থেকে সংগঠনে সক্রিয় হন তিনি। ২০২২ সালে তাকে এ অঞ্চলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাইফ সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। আত্মগোপনে থেকে আশকারি শাখার অন্য সদস্যদের প্রশিক্ষণ, নতুন সদস্য রিক্রুটের কাজ তার নেতৃত্বে হতো।

বখতিয়ার রহমান সাভারে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন। কিছুদিন আগে সিটিটিসি একজনকে রোগী সাজিয়ে তার বাড়িতে পাঠায়। কিন্তু বিষয়টি বুঝতে পেরে দ্রুত আত্মগোপনে চলে যান। গতকালের অভিযানে অন্যদের গ্রেফতারের সময় বখতিয়ারকেও পাওয়া গেছে।

জাহেদুল জয়দেবপুর অঞ্চলের দাওয়াহ বিভাগের প্রধান। ঢাকার আশপাশে আনসার ইসলামের বেশ কয়েকটি সেল রয়েছে। এর মধ্যে সাভার অঞ্চলের একটি সেলের দায়িত্ব ছিল তার। ২০১৫ সালে ঢাকা কলেজে স্নাতক পড়ার সময় সংগঠনে জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি ঢাকার একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন।