বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গোদাগাড়ীতে ‘নিলামে কিনি’ নাটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ীহাটে আঞ্চলিক দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারের ৪০টি গরু চক্র বিশেষের কবজা করার সুবিধার্থে মঙ্গলবার মঞ্চস্থ হয়েছে লক্ষ টাকার ‘নিলামে কিনি’ নাটক। ৪০০ ব্যবসায়ীর নামে নিলামের বিডি (আবেদন) জমা পড়লেও নিলামে অংশ নেন মাত্র চারজন। চারজনের পক্ষে আবার শুধু দর হাঁকেন একজন। এ নিলামে কেনা একেকটি গরু পরে সেখানেই ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে। এই ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ ও বিনোদনের সঞ্চার হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে গুঞ্জনও। গুঞ্জন বলছে, খামার কর্তৃপক্ষের প্রশ্রয়েই নাটকটি হতে পেরেছে। খামারের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ৪০০ জন বিডি জমা দিয়েছেন। কিন্তু কেউ যদি না ডাকেন, তাহলে আমার কী করার আছে। এভাবে নিলাম না করলে পরিবেশ নষ্ট হবে, ঝামেলা হবে। তাই করতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, সেখানে পুলিশ রেখেছিলেন। সবাই নির্ভয়ে অংশ নিতে পারতেন। স্থানীয় লোকজন জানান, নিলামে গরু কিনি প্রহসনের নেতৃত্বে ছিলেন রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সালমান ফিরোজ ফয়সাল। প্রকাশ্য নিলামে অংশ নেন কালু, বাবু, মেহেরাব ও বাদশা। বাদশা ওই প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তিনিই সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন মূল্যের চেয়ে মাত্র ২০০ টাকা করে বেশি দিয়ে অন্যদের পক্ষের দর হাঁকেন। বাদশা এক, দুই, তিন বলার সঙ্গে সঙ্গে নিলাম চূড়ান্ত করা হয়। আর কাউকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বেলা ১১টায় নিলাম শুরু করতে চাইলে সালমান ফিরোজ ফয়সাল নিলামের আগে আরেকটু সময় চান। কর্মকর্তারা সময় দেন। এবার নিলামে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে আলাদা করে কথা বলেন সালমান ফিরোজ। তিনি ‘সায়’ দেওয়ার পর কর্মকর্তারা নিলাম শুরু করেন।

খামারের কর্মচারী রইস উদ্দিন তিনটি বাছুরের সর্বনিম্ন সরকারি মূল্য ৭৬ হাজার টাকা ঘোষণা করেন। কালুর পক্ষে বাদশা দর হাঁকেন ৭৬ হাজার ২০০ টাকা। এরপর অমিত হাসান নামের এক ব্যক্তি ডাকলেন ৭৬ হাজার ৪০০ টাকা। এ সময় বাদশা তাকে তেড়ে যান। অমিত হাসানকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সিন্ডিকেটের বাইরে থাকা অমিত গরুর দাম ২০০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়ায় বাদশা এবার বাবুর হয়ে দাম হাঁকেন ৭৬ হাজার ৬০০। নিলাম শুরুর দুই মিনিটের মধ্যে এই গরুগুলো এভাবে বিক্রি করা হয়।

খামারের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি দর বেঁধে দেয়। তারা ২৩০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা কেজি হিসেবে গরুর দর ঠিক করে দেয়। এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্স যোগ করে দর নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসাবে ৪০টি গরুর সরকার নির্ধারিত মূল্য ছিল ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৬০০ টাকা। বিক্রি হয়েছে ১৭ লাখ ৬৩ হাজার ৮০০ টাকায়। সরকারের তো ক্ষতি হয়নি।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফয়সালকে একাধিকবার মোবাইলে (০১৭১৯-২০৯২৮৫) কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরিচয় দিয়ে মেসেজ পাঠানো হলেও জবাব দেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর